গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই: কামাল আহমেদ
শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রায় নয় মাস পেরিয়ে গেলেও একটি সুপারিশও কার্যকর না হওয়ায় চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ। তিনি বলেছেন, কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবগুলোর কোনোটিই এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি—এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) ষষ্ঠ সম্প্রচার সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কামাল আহমেদ বর্তমানে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এর কনসালটিং এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তাঁর প্রতি সরাসরি দায় আরোপ না করলেও অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন কামাল আহমেদ। তিনি বলেন, “বাস্তবতা হলো—অন্তর্বর্তী সরকার এই বিষয়ে কার্যত কিছুই করেনি।”
কামাল আহমেদ জানান, গত ২২ মার্চ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়। তখন আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর একটি পৃথক তালিকা চাওয়া হলে কমিশন মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা প্রস্তুত করে জমা দেয়। প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার নির্দেশ দিলেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন কমিশনের প্রধান। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রতিবেদনের ওপর কাজ করার কথা বললেও তা মূলত বিভিন্ন দপ্তর ও অধিদপ্তরে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রাপ্ত মতামতে বলা হয়েছে—সুপারিশগুলো বাস্তবায়নযোগ্য নয়।
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) একীভূত করে একটি স্বায়ত্তশাসিত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রস্তাবের কথাও তুলে ধরেন তিনি। এ ক্ষেত্রেও সরকারের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেন কামাল আহমেদ।
তিনি জানান, উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে দুই দফায় দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল—একটি শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরারকে আহ্বায়ক করে এবং অন্যটি পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে। তবে এসব কমিটির কার্যক্রম থেকেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“এখন সময় প্রায় শেষের দিকে,” উল্লেখ করে কমিশনের প্রধান বলেন, সরকার চাইলে অন্তত ২০টি সুপারিশ কেবল প্রশাসনিক নির্দেশনার মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করতে পারত। তা না হওয়াই তাঁর গভীর হতাশা ও ক্ষোভের কারণ।
সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক শাহনাজ শারমিন। এতে আরও বক্তব্য দেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সারা হোসেন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বিজেসির উপদেষ্টা খায়রুল আনোয়ার, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিজেসির ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ এবং বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি মো. আল মামুনসহ অন্যান্য অতিথিরা।
১১৬ বার পড়া হয়েছে