বিএনপির রদবদল: খালেদা জিয়ার তিন আসনে বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত
সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৬:২৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রার্থী তালিকায় ব্যাপক রদবদল এনেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, মাঠপর্যায়ের জরিপ, অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ এবং রাজনৈতিক সমীকরণ বিবেচনায় নিয়ে ‘ধানের শীষের বিজয়’ নিশ্চিত করতেই এসব পরিবর্তন করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে দলটি।
এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সম্ভাব্য তিনটি আসন- বগুড়া, দিনাজপুর ও ফেনীতে তাঁর জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব আসনে বিকল্প প্রার্থীও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল সূত্র।
খালেদা জিয়া বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ। তিনি ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিএনপির দাবি, তিনি সংকটময় সময় পার করছেন। এই পরিস্থিতিতে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে যেন দল সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত থাকে, সে কারণেই বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে।
দলীয় সূত্র অনুযায়ী, ফেনী-১ (ফুলগাজী–পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া) আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র জমা দেবেন ওই আসনের নির্বাচন সমন্বয়ক এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম (মজনু)। খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে অক্ষম হলে তিনি ওই আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন।
অন্যদিকে, বগুড়া-৭ (গাবতলী) আসনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম এবং দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনে সাবেক পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনায় নিজেদের জন্যও মনোনয়নপত্র নেওয়া হয়েছে এবং চূড়ান্ত নির্দেশনা পেলে তা জমা দেবেন।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বগুড়া-৬ (সদর) আসনের পাশাপাশি ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী-ক্যান্টনমেন্ট) আসন থেকেও নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন। ঢাকা-১৭ আসনে তাঁর নির্বাচনী কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালামকে প্রধান সমন্বয়ক করা হয়েছে।
এর আগে ঢাকা-১৭ আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থী ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ। তিনি প্রচার শুরু করলেও এখন ভোলা সদর আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
ঢাকা-১২ (তেজগাঁও–হাতিরঝিল–শেরেবাংলা নগর) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাইফুল আলম নীরবের নাম ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে আসনটি যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হককে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি ‘কোদাল’ প্রতীকে নির্বাচন করবেন।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ–সাতকানিয়া) আসনটি শুরুতে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান অলি আহমদের ছেলে ওমর ফারুকের জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছিল। তবে অলি আহমদের দল জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেওয়ায় আসনটিতে বিএনপি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জসিমউদ্দিনকে প্রার্থী করেছে।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ব্যবসায়ী মো. মাসুদুজ্জামান মনোনয়ন পেলেও নির্বাচন করতে অনীহা প্রকাশ করলে সেখানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালামকে প্রার্থী করা হয়।
চট্টগ্রামের একাধিক আসনেও পরিবর্তন এসেছে। চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবর্তে গোলাম আকবর খন্দকারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান পদ স্থগিত করা হয় এবং গোলাম আকবর খন্দকারের নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে সরিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, হালিশহর ও খুলশী) আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমানের পরিবর্তে বিএনপির নেতা মীর শাহে আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের ঋণখেলাপি সংক্রান্ত মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকায় এ পরিবর্তন আনা হয়।
এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, মুন্সিগঞ্জ-২ ও মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনেও প্রার্থী বদল হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে সাবেক সচিব মুশফিকুর রহমানের পরিবর্তে কবির আহমেদ ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে এক্মি গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সিনহার পরিবর্তে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ এবং মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে কামরুজ্জামান রতনের পরিবর্তে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. মহিউদ্দিন আহমেদ মনোনয়ন পান।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান গত শনিবার পদত্যাগ করে ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন। নড়াইল-২ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামের পরিবর্তে এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া যশোর-১, যশোর-৫, যশোর-৬ এবং মাদারীপুর-১ আসনেও প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “আমার জানামতে ৩০০ আসনের মনোনয়নই চূড়ান্ত। প্রতিদিন একজন-দুজন করে মনোনয়ন দেওয়ার কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা যায়নি। প্রার্থী পরিবর্তন নির্বাচনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।”
১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি দুই দফায় ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল। পরে মিত্র ও শরিকদের জন্য ১৫টি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ১৩টি আসনেও মনোনয়ন চূড়ান্ত হলেও নাম প্রকাশ করা হয়নি।
১০৬ বার পড়া হয়েছে