ইবিতে জুলাই আন্দোলন ইস্যু: শাস্তির আড়ালে থেকে গেলেন প্রভাবশালীরা
শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৯:৫৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থানবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নেওয়া সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।
২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় ৩০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ৩৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও অভিযোগ উঠেছে—মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জুলাই আন্দোলন দমনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত এমন মোট ৬৩ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাওয়া শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক মহবুবুর রহমান, অধ্যাপক রবিউল ইসলাম ও অধ্যাপক আক্তারুল ইসলামসহ কয়েকজন। তবে অভিযোগ রয়েছে, সাবেক প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কিছু শিক্ষক কৌশলে এই প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে জুলাই আন্দোলনবিরোধী র্যালি ও সমাবেশে অংশ নেওয়া একটি গোষ্ঠীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সে সময় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালানো, পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা এবং প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরির অভিযোগ সামনে আসে। একই সঙ্গে রবীন্দ্র-নজরুল গণন হরকরা গ্যালারিতে আওয়ামীপন্থী একটি গোষ্ঠীর জরুরি বৈঠকে জুলাই আন্দোলন প্রতিহত করার কৌশল নির্ধারণ করা হয় বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র বলছে, ওই বৈঠকে আন্দোলন দুর্বল করা, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের রূপরেখা তৈরি করা হয়। এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত হিসেবে অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন, অধ্যাপক ড. মেহের আলী, অধ্যাপক ড. গৌতম কুমার দাস, অধ্যাপক ড. এইচ এম আক্তারুল ইসলাম জিল্লু, অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন আজাদ ও শিরিনা বিথীর নাম উঠে এসেছে।
সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সাবেক প্রশাসনের একাধিক শিক্ষকের নাম লিখিতভাবে প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হলেও অভিযোগ উঠেছে, অভ্যন্তরীণ প্রভাব ও রাজনৈতিক সমীকরণের কারণে কয়েকটি নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়া তালিকায় সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমানসহ কয়েকজন প্রভাবশালী শিক্ষকের নাম রয়েছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “ফ্যাসিবাদের প্রশ্নে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।”
তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের প্রশ্ন—যদি আন্দোলন দমন, হুমকি ও প্রকাশ্য বিরোধিতায় জড়িত প্রভাবশালীরা থেকেই যান ধরাছোঁয়ার বাইরে, তাহলে এই বিচার কতটা ন্যায়সঙ্গত? ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কি সত্যিই জুলাই আন্দোলনবিরোধীদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ জবাবদিহি নিশ্চিত হচ্ছে, নাকি দায় চাপানোর একটি নির্বাচিত প্রক্রিয়াই চলমান—এ প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে পুরো ক্যাম্পাসে।
১৬৫ বার পড়া হয়েছে