ভারতের মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’ নির্মাণে ভক্ত মুসল্লিদের ঢল
রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩:১৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের নামেই নতুন ‘বাবরি মসজিদ’ নির্মাণকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনা ও বিতর্ক।
জেলাটির বেলডাঙা-২ ব্লকের ছেতিয়ানি এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সাসপেন্ড হওয়া ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের উদ্যোগে এই মসজিদ কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে ৬ ডিসেম্বর ২০২৫, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩৩ বছর পূর্তির দিনেই।
ভোর থেকে দূর-দূরান্ত থেকে আসতে শুরু করেন ধর্মপ্রাণ মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশু–কিশোররা। কেউ হাতে, কেউ আবার মাথায় করে বহন করেছেন লাল ইট; প্রতীকী অংশগ্রহণের অংশ হিসেবে মাত্র ১০ রুপি মূল্য দিয়ে যে যতগুলো ইট কিনতে পেরেছেন, তা নিয়েই দৌঁড়ে বা হেঁটে ছুটেছেন নির্ধারিত জমির দিকে। অনেকেই জানান, অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভেঙে দেওয়ার ক্ষত এখনও তাদের মনে তাজা, তাই নিজেদের কেনা ও বহন করা ইট যেন সেই হারানো ইতিহাসের প্রতিস্থাপন হিসেবে নতুন বাবরি মসজিদের গাঁথুনিতে জায়গা করে নেয়—এমন প্রত্যাশাই নিয়ে তারা এই উদ্যোগে অংশ নিচ্ছেন।
আয়োজনটি শুধুই একটি মসজিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বলে জানিয়েছেন উদ্যোগের মূল পরিকল্পনাকারী হুমায়ুন কবীর। তার ভাষ্যমতে, এখানে পর্যায়ক্রমে বিশাল ইসলামী স্থাপনা, হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ, হোটেল–রেস্টুরেন্ট ও বিনোদনকেন্দ্রসহ একটি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে, যার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি রুপি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগমের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, অংশগ্রহণকারীদের জন্য বিরিয়ানিসহ এলাহী আপ্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যার পেছনেও ব্যয় হয়েছে কয়েক কোটি রুপি।
এদিকে এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে প্রশাসনের সঙ্গে আয়োজকদের একাধিক বৈঠক হয়; সম্ভাব্য উত্তেজনা সামাল দিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এলাকাজুড়ে। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই উদ্যোগের সমালোচনা করে একে ভোটের রাজনীতিতে ধর্মীয় আবেগের অপব্যবহার বলে অভিযোগ তুললেও, হুমায়ুন কবীর দাবি করেছেন, তিনি আইন মেনেই কাজ করছেন এবং মুসলিম সমাজের আবেগ ও অধিকারের প্রশ্নেই নতুন ‘বাবরি মসজিদ’ নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাবেন।
সব বিতর্ক ও সমালোচনার মাঝেও ছেতিয়ানির মাঠজুড়ে ইট-বালু কাঁধে নেওয়া সাধারণ মানুষের দীর্ঘ সারি অন্য এক চিত্র তুলে ধরেছে। তাদের কাছে ১০ রুপির বিনিময়ে কেনা একটি ইটও যেন নিজস্ব ঈমানি অংশগ্রহণের প্রতীক, আর সেই প্রতীকী ইটের গাঁথুনিতেই গড়ে উঠছে মুর্শিদাবাদের নতুন ‘বাবরি মসজিদ’—এমন অনুভূতি নিয়েই তারা ফিরছেন ঘরে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।
১২০ বার পড়া হয়েছে