সর্বশেষ

মতামত

বাসে আগুনের রাজনীতি: শেখ হাসিনার নির্দেশনা থেকে আজকের অস্থিতিশীলতা

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ৬:৩৭ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
এই তো সেদিন ২০২৩ সালের নরসিংদী স্টেডিয়ামে ১২ নভেম্বর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন নিজের সরাসরি বক্তৃতায়।

তার ভাষ্য ছিল - “কেউ বাসে আগুন দিতে গেলে, তাকে সেই আগুনে ফেলে দেবেন, যাতে সে বুঝতে পারে আগুনের জ্বালা কতটা ভয়ংকর।” সেই সঙ্গে জোর দিয়ে বলেছিলেন, “জনগণের সমর্থন নেই যাদের, তারা বিদেশে পালিয়ে থেকে অগ্নিসন্ত্রাস, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সাহস থাকলে, দেশে এসে রাজনীতি করুক”।

তখন দেশের বহু মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল, অগ্নিসন্ত্রাস-চক্রান্ত মূলত বিএনপি বা বিরোধীপক্ষের সৃষ্ট আয়োজন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান কঠোর বার্তা দিয়ে রাজনীতির ময়দানে নিজের অবস্থান আরও শক্ত করার প্রচেষ্টা-এমনটাই ছিল অফিশিয়াল বিবরণ। কিন্তু দুই বছরের মাথায় দেশের বাস্তব পরিস্থিতি ঘুরে গেছে নাটকীয়ভাবে।

বিদেশপলায়ন: এখন কারা “পালিয়ে”?
আজকের প্রেক্ষাপটে এসে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের চরম দুর্যোগ ও নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মামলা-হুমকির মুখে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ শীর্ষ নেতা থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত হাজারো নেতা-কর্মী ভারত, সিঙ্গাপুর, ইউরোপ-আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে আত্মগোপন করেছেন। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ, অর্থ লুট, ভোট জালিয়াতি, বিচারবহির্ভূত হত্যা-গুমের ৫৮৩টি মামলা চলমান এবং রায়ের জন‍্য অপেক্ষমাণ।

কিন্তু বিড়ম্বনা হচ্ছে, দুই বছর আগের স্বর, আজ নিজ দল ও নেতৃত্বের গায়েই যেন সমানভাবে আচড়ে লাগছে-যেখানে “দেশে এসে সামনে দাঁড়িয়ে মোকাবিলার আহবান” এখন বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগের শত শত নেতা ও কর্মীর জন্যও প্রযোজ্য হয়ে গেছে।

অগ্নিসন্ত্রাসের দায়িত্ব ও মাঠ-বাস্তবতা
মাঠের ঘটনাপ্রবাহে দেখা যায়, অগ্নিসন্ত্রাস-বাসে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ, ঝটিকা মিছিল- এসবের নেপথ্যে রয়েছে কোন নির্দিষ্ট দলের ভাড়া করা কর্মী এবং কোথাও আওয়ামী লীগেরই লোকজন, যারা বিদেশে বসা নেতাদের চক্রান্ত-নির্দেশে মাঠে সহিংসতার নেতৃত্ব দিচ্ছে।

এখন মাঠের ও সামাজিক বাস্তবতায়-নানান কর্মসূচিতে জনগণের মূল বক্তব্য: “নেতা-নেত্রী, যেই হোন-বিদেশে থেকে দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ ও সহিংসতা উস্কে তুলবেন না। সাহস থাকলে, আইন ও জনতার আদালতে সামনে দাঁড়িয়ে উত্তর দিন।”

জনযুদ্ধ ও ভবিষ্যতের নিষ্পত্তি
হাসিনার সেই বক্তৃতার ছত্রে ছত্রে উঠেছিল “অগ্নিসন্ত্রাসীকে আগুনে ফেলে দাও”-এই বাক্য এক সময় প্রতীকী প্রতিরোধের কথা বোঝালেও, আজ তা রাজনৈতিক নেতাদের জাতীয় জবাবদিহির দাবি হয়ে ওঠেছে। জনগণের আশা এখন-“শুধু একজন নয়, যেই হোন না কেন-বাংলাদেশের গণতন্ত্র-ধ্বংস, অর্থ লুট, ভোট ডাকাতির দায়ে যার হাত আছে, তাকে জনগণের সাথে দেশের মাটিতে সোজাসুজি দাঁড়াতে হবে।”

এখন জনতার সামনে এক তীব্র প্রশ্ন-সেদিন জনগণকে যার বিরুদ্ধে আগুনে ফেলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, সেই নেতা নিজেই, বনিবনা না মিললে, বিদেশে আত্মগোপনে থেকে “দেশবিরোধী চক্রান্ত-অগ্নিসন্ত্রাস”-এর নির্দেশ দেন কিনা? তখনকার এক তারেক রহমান আজ শত শত নেতা-জনগণ একে গণজবাবদিহি, বিচার এবং গণতান্ত্রিক কাঠামো ফেরত আনার চাওয়া হিসাবে নতুনভাবে উচ্চারণ করছে।

বাংলাদেশের জনগণ এখন চায়, সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব- সে শেখ হাসিনা হোক বা তারেক রহমান, কিংবা যে-ই গণতন্ত্র, জনস্বার্থ, আইন ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত-তার যেনো সত্যিকার বিচার হয়; সবাই সাহস নিয়ে দেশে ফিরে, জনতার আদালতে দাঁড়িয়ে জবাবদিহি করে।

রাজনীতির স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, ত্যাগ ও সম্মতিকেই নতুন বাংলাদেশের পথপ্রদর্শক হিসাবে। সেই প্রত্যাশায়, আজকের সংবাদ আলোচিত, বিতর্কিত, কিন্তু অবশ্যই সত্য ও গণতন্ত্রের নিরাপত্তার দাবি।


লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট। 

১৩৩ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন