রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা: অগ্নিসংযোগে আতঙ্ক, নিরাপত্তা জোরদার
বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫ ৬:৪৫ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে গত কয়েকদিনে একাধিক অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
দুর্বৃত্তদের এসব সহিংস কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেই এসব ঘটনা ঘটছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে গ্রামীণ ব্যাংকের একটি শাখায় পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া গাজীপুরের তিন স্থানে তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়—শ্রীপুর, ভোগড়া বাইপাস ও চক্রবর্তী এলাকায়। যদিও এসব ঘটনায় হতাহতের খবর নেই, তবে ময়মনসিংহে মঙ্গলবার রাতে একটি বাসে আগুনে চালক নিহত হন।
রাজধানীতেও গত দুই দিনে একাধিক বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাজনৈতিক কার্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছে ককটেল। এর মধ্যে সেন্ট জোসেফ স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মোহাম্মদপুরের একটি প্রিপারেটরি স্কুলে ককটেল ও পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ফলে আতঙ্কে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা করেছে, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় স্থগিত করেছে ক্লাস ও পরীক্ষা।
জনৈক অভিভাবক জানান, 'বর্তমান পরিস্থিতি খুবই অস্থিতিশীল। আমি আমার সন্তানকে আপাতত স্কুলে পাঠাচ্ছি না। আমরা চাই, দ্রুত এই সহিংসতার অবসান ঘটুক এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।'
অন্যদিকে ব্যবসায়ী মহলও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'অবশ্যই আমরা শঙ্কিত, তবে বিশ্বাস করি সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, 'সহিংসতা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এতে দেশের ভাবমূর্তি ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।'
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, হেলমেট ও মাস্ক পরিহিত ব্যক্তিরা মোটরসাইকেলে করে এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানান, এসব ঘটনায় অপ্রাপ্তবয়স্কদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, 'ঢাকাবাসী আমাদের সঙ্গে আছে। কেউ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এদিকে, সহিংস পরিস্থিতিতে বুধবার রাজধানীর সড়কগুলো ছিল তুলনামূলক ফাঁকা। অফিসগামীদের উপস্থিতি কম দেখা যায়। অনেক নাগরিক নিরাপত্তার অভাবে বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছেন।
নাগরিক সমাজ ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে- সহিংসতা বন্ধ করে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য।
১১০ বার পড়া হয়েছে