সাতক্ষীরায় বিএনপির বহিষ্কৃত নেতার মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আবেদন
রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫ ৯:২৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বহিষ্কৃত নেতা ও আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফের বিএনপি মনোনয়ন বাতিলের দাবি উঠেছে সাতক্ষীরায়।
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত থাকা সত্ত্বেও তাঁকে সাতক্ষীরা সদর-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ঘোষণা করায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তৃণমূল নেতারা।
বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১২ ইউনিয়নের বিএনপির ৩৩ জন সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক যৌথভাবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে লিখিত আবেদন জানান।
আবেদনে বলা হয়, মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী আব্দুর রউফ অতীতে একাধিকবার দল পরিবর্তন করেছেন। ২০০৯ সালে তিনি বিএনপি ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে আবার বিএনপিতে ফেরেন।
তারা উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ২৫ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বিএনপি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রউফকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করে, যা এখনো বহাল রয়েছে। তাছাড়া, গত ২৩ এপ্রিল এক মাহফিলে ইসলামি বক্তা কবির বিন সামাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনায়ও তিনি বিতর্কে জড়ান। ওই ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় আলেম-ওলামারা মানববন্ধন করে তাঁর গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
আবেদনে আরও বলা হয়, রউফ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে অংশ নিয়েছিলেন, যা তাঁর বহিষ্কারের অন্যতম কারণ। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহমাতুল্লাহ পলাশ ও সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলুর স্বাক্ষরিত বিবৃতিতেও জানানো হয়, রউফ বর্তমানে বিএনপির কোনো পদে নেই।
এছাড়া, সাতক্ষীরা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন ও সরকারি খাসজমি দখলের ঘটনায় গত বছর জেলা প্রশাসক প্রকাশ্যে তাঁকে “বাটপার” বলে মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন নেতারা। তাঁদের আশঙ্কা, এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে দলের ভাবমূর্তি ও ঐক্য প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আবেদনটির অনুলিপি বিএনপির খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
এর আগে, গত ৩ নভেম্বর (সোমবার) রাতে বিএনপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরপরই সাতক্ষীরায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ওই রাতে শহরের বিনেরপোতা বাইপাস মোড়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা রউফের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের কারণে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের আশ্বাসে তারা কর্মসূচি স্থগিত করেন।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, তৃণমূলের বিরোধ ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে আলিপুর ইউপি নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ায় আব্দুর রউফকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে সাতক্ষীরা বাস টার্মিনাল ও সরকারি খাসজমি দখলসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে তিনি আলোচনায় আসেন। জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে প্রায় ৩০ বিঘা সরকারি খাসজমি তাঁর নিয়ন্ত্রণ থেকে উদ্ধার করা হয়।
তাঁর ভাই জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হবি ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন দখলের চেষ্টার অভিযোগে আলোচনায় আসেন, যদিও পরবর্তীতে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। তাঁদের আত্মীয় আ.ন.ম আবু সাঈদের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব দখলেরও অভিযোগ রয়েছে, যা এখনও তাঁদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানা গেছে।
১১৩ বার পড়া হয়েছে