ভারতে থাকা অভিবাসী নেপালিদের হুমড়ি খেয়ে ফেরা শুরু

শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৫:৩২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
নেপালে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার প্রেক্ষাপটে ভারতে অবস্থানরত বিপুল সংখ্যক নেপালি নাগরিক দ্রুত স্বদেশে ফিরে যাচ্ছেন।
দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে আখ্যা দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতা। আন্দোলনের চাপে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। যদিও পরে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়, কিন্তু ‘জেনারেশন জেড’ নেতৃত্বাধীন আন্দোলন থেমে থাকেনি। বর্তমানে দেশজুড়ে কারফিউ জারি রয়েছে, সেনা টহল দিচ্ছে রাস্তায়, এবং দফায় দফায় জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে সরকারি ভবন ও রাজনীতিকদের বাড়িঘর। সরকারের নেতৃত্বশূন্য এই সময়টিকে অনেকে "প্রতীকী শূন্যতার" সময় বলছেন।
এমন সংকটময় সময়ে ভারতে কাজ করা বহু নেপালি শ্রমিক দ্রুত নিজেদের দেশে ফিরছেন। দিল্লিতে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন সারোজ নেভারবানি। তিনি বলেন, "বাড়িতে সমস্যা চলছে, তাই ফিরতেই হবে। আমার বাবা-মা ওখানে আছেন—পরিস্থিতি খুব খারাপ।"
দুই তরুণ শ্রমিক, পেসাল ও লক্ষ্মণ ভাট জানান, তারা বিস্তারিত কিছু না জানলেও একটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—ফিরে যেতে হবে স্বদেশে। অনেকের কাছে এই ফেরা শুধুই চাকরি হারানোর বিষয় নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে পরিবার, নিরাপত্তা এবং এক দীর্ঘ প্রজন্মব্যাপী অভিবাসনচক্র।
ভারতে থাকা নেপালিদের সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়:
যারা একা ভারতে আসেন কাজের সন্ধানে—গৃহকর্মী, নিরাপত্তারক্ষী, রাঁধুনি বা নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে। তারা নেপালের নাগরিক হিসেবেই থাকেন এবং আধার বা সরকারি সুবিধা পান না।
যারা ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন। পরিচয়পত্র পেয়েছেন, জীবন গড়ে তুলেছেন, তবে এখনও নেপালি নাগরিকত্ব রেখেছেন। ভোট দিতে মাঝে মাঝে নেপালে যান।
যারা ১৮শ থেকে ২০শ শতকের মধ্যে ভারতে স্থায়ী হয়েছেন। তারা ভারতীয় হলেও সাংস্কৃতিকভাবে নেপালের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।
বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত নেপালিদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ কঠিন হলেও, গবেষকরা বলছেন—এই সংখ্যা প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখের মধ্যে হতে পারে। এর বাইরে শিক্ষার ক্ষেত্রেও নেপালি শিক্ষার্থীরা অন্যতম বড় অংশ—সরকারি তথ্যমতে, ভারতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৩ হাজারের বেশি নেপালি।
অর্থনৈতিক বাস্তবতায় অভিবাসনের ধারা
ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেশব বাশ্যাল জানান, নতুন প্রজন্মের শ্রমিকদের বেশিরভাগের বয়স ১৫-২০ বছরের মধ্যে হলেও গড় বয়স ৩৫ বছর। বেকারত্ব, বৈষম্য ও গ্রামীণ অঞ্চলের দরিদ্রতাই এই অভিবাসনের মূল চালিকাশক্তি।
ভারতের উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব, গুজরাট ও দিল্লির মতো রাজ্যে তারা কাজ করেন নির্মাণ, কৃষি ও হোটেল-রেস্তোরাঁয়। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ববিদ জীবন শর্মা বলেন, "নেপাল-ভারত খোলা সীমান্তের কারণে বাস্তব সংখ্যা নির্ণয় কঠিন হলেও, অভিবাসনের এই ধারা এক প্রকার সামাজিক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে।"
খোলা সীমান্ত, সংকটকালীন প্রত্যাবর্তন
প্রায় ১,৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ খোলা সীমান্ত ও ১৯৫০ সালের ভারত-নেপাল শান্তি ও মৈত্রীর চুক্তির কারণে নেপালি নাগরিকরা ভারতে সহজে যাতায়াত, চিকিৎসা, শিক্ষা ও কাজের সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে বর্তমান সংকটে এই সহজ যাতায়াতের পথ হয়ে উঠেছে বিপরীতমুখী—দেশে ফেরার স্রোত যেন সীমান্ত পেরিয়ে নতুন ইতিহাস লিখছে।
১১০ বার পড়া হয়েছে