নিরাপত্তা ও নির্বাচন উত্তাপ: পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে টানাপোড়েন
বৃহস্পতিবার , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩:২১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশে কথিত ‘ক্রমাবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি’ নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানাতে দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বুধবার দুপুরে নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু ভবনে এ তলব অনুষ্ঠিত হয়।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভেক) সাময়িকভাবে কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে ভারতীয় হাইকমিশন। তবে ভারতের কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত আইভেকের কার্যক্রম বৃহস্পতিবার থেকে স্বাভাবিক নিয়মে চালু থাকবে।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বাংলাদেশ-মিয়ানমার বিভাগ) বি শ্যামের সঙ্গে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের বৈঠকটি প্রায় ১৫ মিনিট স্থায়ী হয়। বৈঠকে মূলত ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন ও অন্যান্য ভারতীয় কূটনৈতিক স্থাপনার নিরাপত্তা নিয়ে নয়াদিল্লির উদ্বেগ তুলে ধরা হয়।
তলবের পর এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন ঘিরে ‘কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠীর’ হুমকি ও কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে এ উদ্বেগ জানানো হয়েছে। কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতার আলোকে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় মিশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে—এমন প্রত্যাশাও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ব্যক্ত করে ভারত।
এদিকে ঢাকার কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের হাইকমিশনার ভারতের পক্ষকে স্পষ্টভাবে আশ্বস্ত করেছেন যে, একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনগুলোর নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
বিশ্লেষকদের মতে, দুই দিনের ব্যবধানে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার এবং দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলবের ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কে চলমান টানাপোড়েনকে আরও স্পষ্ট করেছে। গত ১৬ মাস ধরে ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে যে অস্বস্তি বিরাজ করছে, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে তা নতুন মাত্রা পেয়েছে।
বিশেষ করে ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সম্পর্কের উত্তেজনা বেড়েছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচনবিরোধী বক্তব্যের পাশাপাশি ঢাকায় গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান বিন হাদির ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
এ প্রসঙ্গে ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে বাংলাদেশ সরকার। সে সময় ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত সন্দেহভাজনরা ভারতে প্রবেশ করলে তাদের গ্রেপ্তার ও প্রত্যর্পণের আহ্বান জানানো হয়।
সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ভারতের সাম্প্রতিক বক্তব্যে বাংলাদেশকে ‘নসিহত’ করার সুর রয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচন কেমন হবে, সে বিষয়ে প্রতিবেশী দেশের উপদেশ বাংলাদেশ চায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তৌহিদ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উচ্চমানের নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে কাজ করছে—যে পরিবেশ গত ১৫ বছরে ছিল না। তিনি অভিযোগ করেন, অতীতে প্রহসনমূলক নির্বাচন হলেও ভারত তখন কোনো আপত্তি তোলেনি।
ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারত যদি তাঁকে থামাতে না চায়, তাহলে বাংলাদেশের পক্ষে তা সম্ভব নয়। তবে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য যেন নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট না করে—সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
সব মিলিয়ে কূটনৈতিক তলব, নিরাপত্তা উদ্বেগ ও নির্বাচন ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক নতুন করে এক সংবেদনশীল পর্যায়ে প্রবেশ করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২৪৫ বার পড়া হয়েছে