সর্বশেষ

জাতীয়এই সপ্তাহেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা: ইসি
ধর্ম ব্যবহার করে দেশে পরিকল্পিত বিভাজনের চেষ্টা : মির্জা ফখরুল
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি, তবে বিমান ভ্রমণের উপযোগী নয় : চিকিৎসক
পঞ্চদশ সংশোধনীর আপিলের পরবর্তী শুনানি আগামীকাল
সরকারের সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য, আজও বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে তেল
স্কুলিং মডেল বাতিলের দাবিতে ৫ কলেজের শিক্ষার্থীদের শাহবাগ মোড় অবরোধ
রায়েরবাজারে জুলাইয়ে অজ্ঞাত ১১৪ শহীদের মরদেহ উত্তোলন
সারাদেশরংপুরের তারাগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা দম্পতির গলাকাটা লাশ উদ্ধার
ফরিদপুরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহীসহ ৩ জন নিহত
পঞ্চগড়ে আজও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড, জনজীবন স্থবির
আন্তর্জাতিকভারতের গোয়ায় নাইটক্লাবে আগুন, অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু
আলাস্কা-ইউকন সীমান্তে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প, ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই
ভারতের মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’ নির্মাণে ভক্ত মুসল্লিদের ঢল
খেলামেসির জোড়া অ্যাসিস্টে প্রথমবারের মতো এমএলএস কাপ ইন্টার মায়ামির
ফেবু লিখন

মানবিক, নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়

রেজাউল করিম
রেজাউল করিম

রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৪:১৭ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে আমরা দিন দিন মানুষ থেকে অমানুষ হয়ে উঠছি।

আমরা কেউ কারো উপকারে এগিয়ে আসতে ভয় পাই বা সংকোচবোধ করি, কারন বর্তমান সমাজব্যবস্থা আমাদেরকে স্বার্থপর হতে শেখাচ্ছে; অন্যের উপকারে এগিয়ে না গেলেও নিজের প্রয়োজনে ঠিকই এগিয়ে যাই, অথচ এটা ভুলে যাচ্ছি আজকের উত্থান কালকে পত্তনে পরিণত হতে পারে। তাই কারো উত্থান বা তার দৃষ্টিনন্দন অবস্থান দেখেই ঝাপিয়ে পড়বেন না – কারন তার উপেক্ষা আপনাকে বেদনা দেবে।

আর যে আপনাকে গুরুত্ব দেয়, তাকে কখনো অবহেলা করবেন না – কারন তারই কাছ থেকে প্রাপ্ত মূল্যায়নই আপনার মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করবে।

বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় আমরা যা প্রত্যক্ষ করছি তা হলো মানবিক, নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের সুস্পষ্ট অবক্ষয়। এই অবক্ষয়ের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে আমাদের আচরণের দ্বিচারিতায়: আমরা যখন নির্যাতনের শিকার হই, তখন ন্যায়বিচারের জন্য সওয়াল করি, অত্যাচারকে গভীরভাবে ঘৃণা করি। কিন্তু যখনই সামান্য ক্ষমতা, সুযোগ বা শ্রেষ্ঠত্বের অবস্থান আমাদের হাতে আসে, তখনই আমরা সেই একই নির্যাতনের দায়িত্ব নিজেরা পালন করতে দ্বিধা করি না। পারিবারিক কলহ, কর্মক্ষেত্রের নিষ্ঠুরতা, রাজনৈতিক বলপ্রয়োগ, সামাজিক বৈষম্য—সবখানেই এই দ্বিমুখী চরিত্রের বিষবৃক্ষ রোপিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সহজে বলতে পারি —-"তুমি যখন দেখবে —কেউ তোমার প্রতি জুলুম করে তখন বুঝবে—খোদার দয়া ও রহমত তোমার সন্নিকটে? আবার তুমি যদি খোদার দয়া পেয়ে—তোমার মধ্যে অহংকারের ছায়া দেখতে পাও তাহলে মনে করবে অধঃপতন তোমার সন্নিকটে।” —আমার এই লেখার মাধ্যমে আমি আমাদের চলমান সামাজিক সংকটের মূল উপসর্গ ও তার প্রতিকার উভয়েরই দিকনির্দেশকেই ইঙ্গিত করে লিখেছি। প্রথমতঃ আমার বাণীটির প্রথমাংশ আমাদের একটি বিপরীতমুখী কিন্তু অর্থবহ ও প্রাসঙ্গিক দৃষ্টিভঙ্গি শেখায়। কোনো জুলুম যখন আমাদের ওপর আঘাত হানে, তখন তা কেবল একটি অন্যের পাপ নয়; বরং তা আমাদের ধৈর্য, সংযম, ন্যায়ের প্রতি দৃঢ়তা এবং পরম করুণাময় আল্লাহর করুণার ওপর আস্থা রাখার একটি পরীক্ষা। এটি আমাদের ভেতরের মানবিক শক্তিকে জাগ্রত করে, সংহতি বাড়ায় এবং ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর অদৃশ্য শক্তি জোগায়। অর্থাৎ, অত্যাচারিত হওয়ার মুহূর্তটিকেও আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উৎকর্ষের একটি সোপান হিসেবে দেখা সম্ভব—যদি আমরা তা থেকে বিদ্বেষ নয়, বরং সহমর্মিতা ও ন্যায়পরায়ণতার শিক্ষা নেই।

কিন্তু আমার বাণীটির দ্বিতীয়াংশ আরও বেশি প্রাসঙ্গিক আজ। আমাদের সমাজে যারা সামান্য সামর্থ্য, ক্ষমতা বা সফলতা পাচ্ছেন, তাদের মধ্যে সেই সাফল্যকে ব্যক্তিগত অহংকারে পরিণত করার প্রবণতা ভয়াবহ। এই অহংকারই হল অধঃপতনের সূচনা। যখন আমরা ভাবি যে আমাদের সুযোগ-সুবিধা, ক্ষমতা বা মর্যাদা একান্তই আমাদের নিজস্ব যোগ্যতার ফল, এবং তা দিয়ে আমরা অন্যের ওপর কর্তৃত্ব ফলাতে পারি—ঠিক তখনই আমরা নৈতিক অবনতির দিকে ধাবিত হই। পারিবারিক কর্তৃত্ব, প্রশাসনিক দুর্নীতি, অর্থনৈতিক শোষণ—সবখানেই এই "অহংকারের ছায়া"ই মূল বিষ।

এ থেকে উত্তরণের পথ একটিই: সচেতনতা ও আত্মসমীক্ষা। পরিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় মঞ্চ থেকে সামাজিক সংগঠন—সব স্তরে এই শিক্ষাটি প্রসারিত করতে হবে যে, ক্ষমতা বা সাফল্য কখনোই অহংকারের জন্য নয়, বরং দায়িত্বশীলতা ও সেবার জন্য। অপরের জুলুম সহ্য করার সময় আমাদের মনে রাখতে হবে যে এটি আমাদের নৈতিক চরিত্র গঠনের সময়; আর নিজের সাফল্যের সময় মনে রাখতে হবে যে এটি অন্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও দায়িত্ববোধ দেখানোর মুহূর্ত।

সমাজের অস্থিরতা ও মূল্যবোধের অবনতি রোধ করতে হলে আমাদের এই দ্বিমুখী আচরণের ফাঁদ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যিনি জুলুম করছেন, তিনি যেন বুঝতে পারেন যে তার এই ক্ষমতার মুহূর্তই তার পতনের নিমন্ত্রণ। আর যিনি জুলুম সহ্য করছেন, তিনি যেন জানতে পারেন যে এই পরীক্ষাই তাকে অভ্যন্তরীণ শক্তি ও নৈতিক উচ্চতা দান করছে।

শেষ করছি আবারও সেই শুরুতে আমার বলা কথাটি দিয়েই—জুলুমে ধৈর্য ধরুন, আশা হারাবেন না। আর সাফল্যে অহংকার করবেন না, বিনয়ী হোন—কারণ, সেই বিনয়ই সমাজে টিকে থাকার একমাত্র নৈতিক ভিত্তি।

লেখক : গবেষক ও বিশ্লেষক

(লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে)

৫৪৪ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন














সর্বশেষ সব খবর
ফেবু লিখন নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন