সর্বশেষ

জাতীয়খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নেয়া হতে পারে
জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আরও ৩৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করল বিএনপি
অন্তর্বর্তী সরকার ইস্যু: হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখল আপিল বিভাগ
ইন্টারনেট বন্ধ ও গণহত্যা: ফরমাল চার্জ গ্রহণ, জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
বাম জোটের মিছিলে পুলিশের বাধা, লাঠিচার্জে আহত কয়েকজন
ভোরে কেঁপে উঠল রাজধানী, অল্পমাত্রার ভূমিকম্পে আতঙ্ক
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত, মেডিকেল টিমের পর্যবেক্ষণ অব্যাহত, শুক্রবার সারাদেশে প্রার্থনার আহ্বান সরকারের
দেশজুড়ে শীতের দাপট বাড়ছে, উত্তরে তাপমাত্রা নামতে পারে ১০ ডিগ্রিতে : আবহাওয়া অফিস
সারাদেশপাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত
সোনাপুরে বিআরটিসি ডিপোতে আগুন: দুই বাস পুড়ে ছাই
চারণকবি বিজয় সরকারের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
আন্তর্জাতিকপুতিনের ভারত সফরের আগেই গুরুত্বপূর্ণ সামরিক চুক্তির অনুমোদন
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় দুই শিশুসহ সাত ফিলিস্তিনি নিহত
খেলারায়পুরে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৪ উইকেটে হেরে সিরিজে সমতা করেছে ভারত
মতামত

লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া: আলোচনায় তারেকের যুক্তরাজ্যে স্ট্যাটাস

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

বৃহস্পতিবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২:৩৯ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত; দেশ–বিদেশে তাঁর সুচিকিৎসা ও আশু রোগমুক্তির জন্য প্রার্থনা জানাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।

একই সঙ্গে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে লন্ডনে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থানরত বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান-একদিকে মায়ের চিকিৎসার সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক সন্তান, অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে যার আইনি স্ট্যাটাস, দেশে না ফেরা ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে ঘিরে চলছে নানা ব্যাখ্যা-বিতর্ক।


খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা: প্রধান প্রাধান্য

বয়স ও জটিল রোগের সমন্বয়ে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ; দেশে চিকিৎসা চললেও বিশেষজ্ঞদের অনেকেই উন্নত সেন্টারে নেওয়ার সুপারিশ করে আসছিলেন। কাতারের সহায়তায় বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ৫ ডিসেম্বর ভোরে লন্ডনে নেওয়ার উদ্যোগ তাই অনেকের চোখে একে মানবিক, চিকিৎসাবিজ্ঞানসম্মত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হিসেবে তুলে ধরেছে।


রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক, গুরুতর অসুস্থ একজন প্রবীণ রাজনীতিকের জন্য উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা ও তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করা এখন অনেকের কাছে মানবিক দায়িত্ব হিসেবে ধরা পড়েছে। এ কারণেই খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা প্রসঙ্গকে অযথা রাজনৈতিক মেরুকরণের কেন্দ্রে না এনে, “সুচিকিৎসা ও নিরাপদ যাত্রা”কে অধিকাংশ বিবেকবান মানুষই প্রথম প্রাধান্য দিচ্ছেন।


সন্তানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে মায়ের চিকিৎসা

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা লন্ডনে শুরু হবে বড় ছেলে তারেক রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে—এটাই তৈরি করেছে এক আলাদা ইতিবাচক মানসিক ছবি। দীর্ঘদিন দূরে থাকা মা–ছেলে এখন একই শহরে; হাসপাতাল নির্বাচন, বিশেষজ্ঞ টিম গঠন, প্রয়োজনীয় কনসালটেশন, দ্বিতীয় মতামত, চিকিৎসা–পরিকল্পনা—সব কিছুই কাছের মানুষকে সামনে পেয়ে তুলনামূলক দ্রুত ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগোনো সম্ভব হবে।
চিকিৎসা নীতির দিক থেকেও গুরুতর রোগীর পাশে নিকট আত্মীয় থাকা মানসিক সাপোর্ট ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ—দুই দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। তাই অনেকেই বলছেন, রাজনৈতিক বিতর্কের বাইরে গিয়ে ‘অন্তত চিকিৎসার সময়’ মা–ছেলের পুনর্মিলনকে একটি স্বাভাবিক, মানবিক ও ইতিবাচক ঘটনা হিসেবেই দেখা উচিত।

যুক্তরাজ্যে তারেক রহমানের স্ট্যাটাস

মাঠের রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবসময়ই আলোচিত একটি নাম। চিকিৎসার এই প্রেক্ষাপটে আবার সামনে এসেছে তাঁর যুক্তরাজ্য–অবস্থান, আইনি স্ট্যাটাস ও দেশে না ফেরা নিয়ে পুরোনো প্রশ্নগুলো—তবে এগুলো মূলত আলাদা আইনি–রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গের সঙ্গে সরাসরি গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়।
একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, যুক্তরাজ্যে তিনি দীর্ঘদিন ধরে বৈধ স্ট্যাটাসে বসবাস করছেন এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে ভিসা–নবায়ন শেষে তিনি “স্থায়ী বসবাসের অনুমতি” পেয়েছেন বলে ধারনা করা হয়। এই স্থায়ী বসবাস–স্ট্যাটাসকে সাধারণভাবে বলা হয় ILR বা “Indefinite Leave to Remain”।


ILR কি?

ILR (Indefinite Leave to Remain) হচ্ছে যুক্তরাজ্যে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বসবাস ও কাজ করার অনুমতি। সহজভাবে বলতে গেলে:
এতে কোনো ভিসার মেয়াদ বারবার নবায়ন করতে হয় না, ব্রিটেনে দীর্ঘমেয়াদে থাকা, কাজ করা, পড়াশোনা করা ও পারিবারিক জীবন গড়ে তোলার আইনগত অধিকার তৈরি হয়, অনেক ক্ষেত্রে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও কিছু সামাজিক সুবিধা গ্রহণের সুযোগও থাকে।
তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—ILR “স্থায়ী বসবাসের অনুমতি”, কিন্তু এটি নিজে থেকে “ব্রিটিশ নাগরিকত্ব” নয়। নাগরিক হতে চাইলে ILR পাওয়ার পর নির্দিষ্ট সময় ব্রিটেনে থাকা, ইংরেজি দক্ষতা ও “লাইফ ইন দ্য ইউকে” পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ইত্যাদি শর্ত পূরণ করে আলাদা করে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হয়। নাগরিকত্ব নেবেন কিনা, কবে নেবেন—এটা ব্যক্তির নিজস্ব আইনি সিদ্ধান্ত; বাইরে থেকে সবাই সবসময় তা নিশ্চিত করে বলতে পারে না।

যুক্তরাজ্যে থাকার সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা

এ ধরনের স্ট্যাটাসে থেকে তারেক রহমানের প্রধান সুবিধা হলো—তিনি যুক্তরাজ্যে দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ, বৈধ ও তুলনামূলক স্থিতিশীল জীবনযাপন করতে পারছেন; পরিবার, চিকিৎসা, আন্তর্জাতিক সংযোগ এবং রাজনৈতিক কৌশল—সব কিছুই তিনি সেখানে একটি নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম থেকে পরিচালনা করতে পারছেন।
কিন্তু সীমাবদ্ধতাও আছে। সাধারণ নিয়মে, টানা দীর্ঘসময় (প্র্যাকটিক্যালি যে রুলগুলোর কথা বলা হয়, সেখানে নির্দিষ্ট সময়ের বেশি ধারাবাহিকভাবে যুক্তরাজ্যের বাইরে থাকলে) ILR–স্ট্যাটাস ল্যাপ্স করার ঝুঁকি থাকে, এবং তখন “Returning Resident” হিসেবে ফিরতে আলাদা আবেদন করতে হতে পারে। আবার কেউ যদি রাজনৈতিক আশ্রয় বা সুরক্ষা–ভিত্তিক স্ট্যাটাস পেয়ে থাকেন এবং বারবার নিজের ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশে গিয়ে সেখানে দীর্ঘ সময় থাকেন, তাহলে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে তাঁর সুরক্ষা–দাবি পুনর্বিবেচনার সুযোগ তৈরি হয়—এটা আশ্রয় আইনের সাধারণ নীতি।


দেশে না ফেরা: আইনি বাস্তবতা

সাম্প্রতিক আদালতের রায় ও সরকারের দায়িত্বশীল মহলের বক্তব্য অনুসারে, তারেক রহমানের দেশে ফেরায় এখন স্পষ্ট কোনো আইনি নিষেধাজ্ঞা নেই—বড় কয়েকটি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন বা সাজা স্থগিত রয়েছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোতে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়ায়। এই প্রেক্ষাপটে সরকারপক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, তিনি চাইলে ট্রাভেল পাস নিয়ে যে কোনো সময় দেশে ফিরতে পারেন; আইনগত বাধা নয়, সিদ্ধান্ত এখন মূলত তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক।
তবু তিনি ফিরছেন না—এ জায়গাটাই রাজনীতিক ও বিশ্লেষকদের কাছে “কৌশলগত হিসাব–নিকাশের” ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে দেশে ফেরার সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজনৈতিক পরিবেশ, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের সমীকরণ; অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে দীর্ঘদিনের স্থায়ী বসবাস, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট এবং সেখানে গড়ে ওঠা আইনি–পারিবারিক স্থিতি—দুটি বাস্তবতার মাঝখানে দাঁড়িয়েই তারেক রহমান আপাতত লন্ডনকেই তাঁর রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবে ধরে রেখেছেন বলে অনেকের অভিমত।


ট্রাভেল ডকুমেন্ট, নাগরিকত্ব–বিতর্ক

তারেক রহমানের পাসপোর্ট, ট্রাভেল ডকুমেন্ট ও নাগরিকত্ব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছে। যুক্তরাজ্যের হোম অফিস থেকে পাওয়া ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেখতে পাসপোর্টের মতো হলেও সেটি মূলত ভ্রমণ–নথি। এটি নিজে থেকে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বা ব্রিটিশ পাসপোর্টের সমতুল্য নয়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশি পাসপোর্ট জমা দেওয়া বা নবায়ন না হওয়াকে কেউ কেউ নাগরিকত্ব ত্যাগ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন, আবার আইনজ্ঞদের একটি অংশ মনে করেন— ভ্রমণ নথি, নাগরিকত্ব আলাদা আইনি প্রশ্ন; নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য আলাদা প্রক্রিয়া লাগে। ফলে “তিনি কেবল ব্রিটিশ কি না, নাকি এখনও বাংলাদেশি নাগরিক”—এই বিতর্কের বড় অংশই এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক ব্যাখ্যার স্তরে, কোনও স্বচ্ছ ও প্রকাশ্য আইনি ঘোষণার বাইরে।
সরকারি পর্যায়ে বলা হচ্ছে—তিনি চাইলে বাংলাদেশি ট্রাভেল পাসে দেশে ফিরতে পারেন; এটি ইস্যু করা টেকনিক্যাল ব্যাপার, রাজনৈতিক বাধা নয়। অন্যদিকে পরিবার ও দলের ঘনিষ্ঠ মহল বলছে—আইনি নিরাপত্তা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি হুট করে দেশে ফিরবেন না।


খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও তারেকের স্ট্যাটাস

এই পুরো প্রেক্ষাপটে একটি বিষয় স্পষ্ট রাখা জরুরি—খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও আশু রোগমুক্তি মানবিক ও সর্বজনীন ইস্যু; এখানে তাঁর পাশে থাকা সন্তানের নাম তারেক হোক বা অন্য কেউ, সেটি প্রথমত মানবিক দায়িত্ব, রাজনীতি নয়। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যে তারেক রহমানের আইনি স্ট্যাটাস, দেশে না ফেরা, নাগরিকত্ব ও ভবিষ্যৎ রাজনীতি—এসব হলো আলাদা আইনি–রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়, যা তথ্য ও আইনের আলোকে ঠাণ্ডা মাথায় বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

আসল কথা

একদিকে গুরুতর অসুস্থ একজন মায়ের সুচিকিৎসার জন্য লন্ডনযাত্রা এবং তাঁর স্বাস্থ্যোন্নতির জন্য মানুষের আন্তরিক প্রার্থনা; অন্যদিকে একই শহরে ছেলের দীর্ঘদিনের স্থায়ী বসবাস, জটিল ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস ও দেশে ফেরার অনিশ্চয়তা—দুটি বাস্তবতা একই সময়ে সত্য, কিন্তু প্রকৃতিতে ভিন্ন। একজন নাগরিক ও পাঠক হিসেবে খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনা করা এবং একই সঙ্গে তারেক রহমানের যুক্তরাজ্য–অবস্থান, ILR, সুবিধা–অসুবিধা ও দেশে না ফেরা বিষয়ে তথ্যনির্ভর, সংযত ও প্রমাণভিত্তিক আলোচনাই হতে পারে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ এবং পেশাদার সাংবাদিকতার পথ।


লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

১২৪ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন














সর্বশেষ সব খবর
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন