জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: গণভোটে 'হ্যাঁ' পেলে পরিবর্তন আসবে সংবিধানে
শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ৫:৫৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক একচ্ছত্র নিয়োগ ক্ষমতা কমিয়ে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতি জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করেছেন, যা এক নজরে দেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দিতে পারে। সনদ বাস্তবায়িত হলে, সরকারের বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে ক্ষমতাসীন দলের সুবিধা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর একক নিয়োগ ক্ষমতা কমে যাবে। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটে জয়ী হলে সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন নিয়মে সমতা ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
নতুন নিয়োগ কমিটি গঠন: প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা কমবে
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর অংশ হিসেবে, সরকারি এবং বিরোধী দল থেকে সমান বা নিরপেক্ষ সদস্য নিয়ে নতুন নিয়োগ কমিটি গঠন করা হবে। নির্বাচনী কমিশন, পিএসসি (সরকারি কর্ম কমিশন), সিএজি (মহাহিসাব নিরীক্ষক) ও দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) সহ বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য এসব কমিটি দায়িত্ব পালন করবে। এর ফলে, ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র নিয়োগ ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়বে।
তবে, সনদ বাস্তবায়ন আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এর ফলে প্রধানমন্ত্রীকে সর্বেসর্বা হিসেবে থাকতে না দিলেও, এখনও কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের প্রাধান্য থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, পিএসসি ও সিএজির নিয়োগ কমিটিতে বিরোধী দল থেকে কিছু প্রতিনিধি থাকলেও, সরকারি দলের পক্ষ থেকে বেশি সদস্য থাকবে।
সংবিধান সংশোধন হবে কঠিন: উচ্চকক্ষে আসন বণ্টন হবে পিআর পদ্ধতিতে
এছাড়া, সনদে প্রস্তাবিত নতুন ব্যবস্থা অনুযায়ী, আগামী সংসদে একটি উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে, যেখানে আসন বণ্টন হবে পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে। এর মাধ্যমে, সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি দলের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষে আসন নির্ধারিত হবে।
সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের ১০০ সদস্যের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন প্রয়োজন হবে। যদি কোনো দল ৫০ শতাংশ বা তার বেশি ভোট না পায়, তবে তারা উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না। এতে করে, ক্ষমতাসীন দলকে সহজে সংবিধান সংশোধন করতে হলে বিরোধী দলগুলোর সমর্থন প্রয়োজন হবে।
গণভোটে প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো
গণভোটে 'হ্যাঁ' ভোটে জয়ী হলে সনদের আওতায় আগামী সংসদের সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ নিয়োগ কমিটি গঠন করবে। সনদের অধীনে, ন্যায়পাল, পিএসসি, সিএজি ও দুদকের নিয়োগের জন্য সাত সদস্যের সাংবিধানিক কমিটি গঠন করা হবে, যাতে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলের সদস্যরা থাকবেন।
তবে, সনদ বাস্তবায়ন আদেশে বিএনপি ও কিছু অন্যান্য দলের নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) রয়েছে, বিশেষত, ন্যায়পাল ও দুদকের নিয়োগ আইন করে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে। তারা মনে করেন, এই ধরনের পরিবর্তন সরকারের শক্তি কমিয়ে দিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা: নতুন সংশোধনীর প্রস্তাব
সংবিধানে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন প্রস্তাব করা হয়েছে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংশোধন করে, দলীয় এমপিদের আস্থা ভোট ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হবে, যা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর আরেকটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া, সনদে বলা হয়েছে যে, কেউ ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না, যা দীর্ঘকালীন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হওয়া প্রতিরোধ করবে।
সনদে আরও একটি প্রস্তাব রয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রধান পদে থাকতে পারবেন না। যদিও বিএনপি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে, তা বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
১৫৩ বার পড়া হয়েছে