সেক্স শপ কি হালাল, না হারাম?

বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫ ১০:৫১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বেশ ক'দিন আগে বৃষ্টিস্নাত মধ্যরাতে ঘুরতে বের হয়েছিলাম। মন্ট্রিয়েল শহর ঘুরতে ঘুরতে চলে যাই এভিনিউ সেইন্ট হুবার্ট। কফিপানের জন্য গাড়ি হতে নামতেই চোখে পড়ে একটি সেক্স শপের।
দোকানের সামান্য দূরত্বে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম, সেক্স বা যৌনতা, একুশ শতকে এসেও আমাদের সমাজে এসব কথা ফিসফিসিয়ে বলার লোকের সংখ্যা শতাংশে নেহাত কম নয়। তাদের চোখে সেক্স যেন নিষিদ্ধ কোন অপরাধ। এ নিয়ে কথা বলা যেন মহা অন্যায়! কিন্ত দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা গুগলে সার্চ দিলেই অহরহ মেলে ‘সেক্স টয়’র বিজ্ঞাপন। এসব পণ্য মিলছে খুব সহজেই। যে কেউ ঘরে বসেই অনলাইনে পছন্দের পণ্যটি পেয়ে যাচ্ছে। অথচ সামাজিকভাবে বিষয়টি এখনো লুকোছাপার মধ্যে রয়ে গেছে।
ইউরোপ আমেরিকা থেকে সেক্স শপ এশিয়ার জাপান, চীন, থাইল্যান্ডের পর লাফ দিয়ে চলে গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে রক্ষণশীল দেশ সৌদি আরবে , যেখানে চলমান যৌনাঙ্গ ছাড়া মানুষ হিসেবে মেয়েদের দেখা হয় না। বিয়াটে উসে ২০১৫ সালে সৌদি আরবের পুরুষদের জন্য সেক্স শপ খুলেছে। যার নাম হালাল সেক্স শপ।
অবশ্য মুসলিম দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম ২০১৩ সালে তুরস্কে খোলা হয়েছে সেক্স শপ। শব্দ দু’টির আগে হালাল যুক্ত করে নাম দেয়া হয়েছে “হালাল সেক্স শপ"। এই স্টোরে পাওয়া যায় সেক্স টয়, ভায়াগ্রা-লাইক স্প্রে, নভেলটি কন্ডোম, লেদার, চাবুক, শেকল, মাস্ক ইত্যাদি।
এরপর ২০১৫ সালে হালাল সেক্স শপ খোলা হয় সৌদি আরবে। প্রশ্ন হচ্ছে, সেক্স শপ আবার হালাল কিভাবে হয়? অথবা হারাম কিভাবে হয়?
সেক্স তো সেক্সই। যৌনতার কাছে হালাল - হারাম বলে কিছু নেই। যা আছে নৈতিক যৌন সম্পর্ক, অনৈতিক যৌন সম্পর্ক। সেক্স নর-নারী উভয়েরই স্বাভাবিক শাররীক চাহিদা। যাহোক, আমার খুব জানার ইচ্ছে, সৌদি আরবের সেক্স শপে গিয়ে একা একটা মেয়ে কিছু কিনতে পারছে কিনা, এই ধরুন ডিলডো টিলডো। নাকি সেক্স শপ শুধু সৌদি পুরুষের জন্য!
ইসলামী বিধি বিধান অনুযায়ী, স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া অন্য কারো সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার কোন সুযোগ নেই। সেক্সটয়ের সাথে শয্যায় যাওয়া হারাম সমতুল্য। তাহলে সৌদি আরব বা অন্য কোন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে কিভাবে সেক্স শপ খুলে ব্যবসা করে?
নাকি ধর্ম বানিজ্য মার খেল বিনোদন বানিজ্যের কাছে?
এই হালাল সেক্স শপ সৌদি পুরুষের কী কী সেবা করছে? নিউজে দেখেছি, প্রথম বছরে সেক্স শপের লেদার, চাবুক, শেকল, মাস্ক ইত্যাদি সৌদি পুরুষদের কাছে ব্যাপক চাহিদায় ছিল। ধারনা করি, এসব ব্যবহার করে সৌদি পুরুষরা নিশ্চয় মেয়েদের বাধ্য করেছে সাব-ডোম রোল প্লে করতে! এসবের ব্যবহার হচ্ছে মেয়েদের ওপর আরেক রকম যৌন অত্যাচার। সৌদি আইন পুরুষের পক্ষে থাকায় মুখ বুজে সবই সইতে হচ্ছে তাদের।
সুখটা শুধু সৌদি পুরুষের জন্যই নয়, সব দেশের পুরুষের জন্য। তাদের চরিত্র একই। সৌদি বলি আর পূর্ব-পশ্চিমের সব মেয়েরাই সত্যিকার কোনও যৌন সুখ পায় না। সব সময় পুরুষ তাদের ওপর কর্তৃত্ব ফলিয়েছে, বঞ্চিত করেছে মৌলিক অধিকার থেকে। যাদের স্বাধীনতা নেই, তাদের আবার যৌন-অধিকার কী! যৌন অধিকার বা যৌন স্বাধীনতা যাদের নেই, তাদের যৌন সুখও নেই। যৌনদাসীরা যৌন সুখ উপভোগ করে না, ধর্ষকামীর যন্ত্রনা ভোগ করে।
সৌদি পুরুষরা এক পত্নীতে সন্তুষ্ট নয়। তাদের অসংখ্য উপপত্নী থাকে। বলাবাহুল্য, মক্কায় সেক্স শপ খোলার পর হতে তাদের আরও যৌন- আরামের ব্যবস্থা হয়েছে বৈকি!
পশ্চিমা দেশে অবশ্য অ্যাডাল্ট টয় বিক্রি বেআইনি নয়। আধুনিক সেক্স শপের যাত্রা শুরু করেছিলেন প্যারিসের ডায়ানা স্লিপ খ্যাতির লোন ভিদাল । তিনি ১৯২০ সালে প্রথম তাঁর সেক্স শপে যৌন প্রেমের বই, ফটোগ্রাফ বিক্রি করা শুরু করেন। এরপর ১৯৬২ সালে প্রথম "অফিসিয়াল" সেক্স শপ খোলা হয় পশ্চিম জার্মানের ফ্লেনসবার্গে বিট উহসে নামে। উত্তর আমেরিকার প্রথম সেক্স শপের নাম ছিল দ্য গার্ডেন, যা কানাডার মন্ট্রিয়ালের ক্রিসেন্ট স্ট্রিটে ১৯৭১ সালে খোলা হয়েছিল।
আমি জার্মানীর বার্লিন, ফ্রাংকফ্রুট, ফ্রান্সের প্যারিস, সুইডেনের স্টকহোম, বেলজিয়ামের ব্রাসেলস, নেদারল্যান্ডের আমাস্টারডাম, আলবেনিয়ার তিরানা, আমেরিকার নিউইয়র্ক, কানাডার মন্ট্রিয়েলে অসংখ্য সেক্স শপ দেখেছি। এসব দোকানে প্রাপ্ত বয়স্ক, সকল বয়সের তরুন তরুনী হতে মধ্য বয়স্ক ও ষাটোর্ধ নারী- পুরুষদের দেখেছি নানান ধরনের সেক্স টয়, কনডম, যৌন উত্তেজক ঔষধ ইত্যাদী কেনাকাটা করতে।
পশ্চিমে সেক্সে হালাল হারাম বলে কিছু নেই। সেক্স হচ্ছে একটা আর্ট, নর নারীর স্বাভাবিক জৈবিক তাড়না। মানুষ এখন শাররীক সুখ পেতে নানান ধরনের সেক্সচুয়াল পন্যের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ায় সেক্স শপের চাহিদা বেড়ে চলেছে।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী, মন্ট্রিয়ল।
১০৬ বার পড়া হয়েছে