সর্বশেষ

জাতীয়

নোয়াপাড়া গ্রুপের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ, ফ্যাসিস্ট কানেকশন ষোলআনা!

মুন্সী তরিকুল ইসলাম, ঢাকা:
মুন্সী তরিকুল ইসলাম, ঢাকা:

রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের হওয়া এক মামলায় নোয়াপাড়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইদুর রহমান লিটুসহ প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা, অপহরণ ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

মামলার লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে তারা দীর্ঘদিন ধরে একচেটিয়া ব্যবসা ও এখনো নিয়ন্ত্রণ করছেন এবং সরকারের পতনের পরও ভিন্ন নামে দিব্বি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মামলার বাদী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন মাসরুর জানান, তিনি ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে নোয়াপাড়া গ্রুপে অফিস ইমাম হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানের গোপনীয় তথ্য ফাঁসের মিথ্যা সন্দেহে ২০২৫ সালের আগস্টে তাকে অফিস কক্ষে আটকে রেখে মারধর, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ভিডিও ধারণ এবং তার ও তার মায়ের কাছ থেকে জোরপূর্বক সাদা কাগজ ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।

বাদীর অভিযোগ, ওই সময় তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পান এবং চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে আসামিরা পুনরায় তাকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার আল্লাহ করীম মসজিদের সামনে অপহরণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালালে স্থানীয়দের সহায়তায় প্রাণে বেঁচে যান। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় মামলা নং–৯৭ ঘটনার তারিখ ২৭/০৮/২৫ দায়ের হয়।

মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক মন্ত্রীদের আত্মগোপনে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে নোয়াপাড়া গ্রুপের মালিক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। বাদীর দাবি, সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও মির্জা আজমের পরিবারকেও নোয়াপাড়া গ্রুপের এমডি ও আসামি সাইদুর রহমান লিটুর ধানমণ্ডির বাসায় আত্মগোপনে থাকতে দেখা গেছে।

এছাড়া, তারা বিসিআইসি, বিএডিসি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে সার আমদানি ও বিপণনে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর নিজেদের পরিচয় আড়াল করতে "সাইফুল্লাহ তাকওয়া" নামে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

মামলায় আসামি হওয়ার পর নোয়াপাড়া গ্রুপের এমডি সাইদুর রহমান লিটু ইতোমধ্যে দুবাই পালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে, প্রতিষ্ঠানের চতুর ম্যানেজার মো. আবু সিদ্দিক সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বলেছেন “পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তারা আমাদের সাথে আছে, আপনাদের এত দরকার কী।”

এমনকি মামলার আসামি হয়েও সম্প্রতি তিনি কৃষি ভবনে গিয়ে বিএডিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলেও জানা গেছে। যা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে- কিভাবে একজন ফৌজদারি মামলার আসামি সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অবাধে বৈঠক করে ব্যবসার সিদ্ধান্ত নিতে পারে?

বিএডিসির চেয়ারম্যান রুহুল আমিন খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া মুঠোফোনে এইমাত্র'কে জানান, মামলার বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে তিনি নোয়াপাড়া গ্রুপের নামটি শুনেছেন এবং বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন। এ সময় তিনি মামলার কপি ও সংশ্লিষ্ট তথ্যও চান, যা পরবর্তীতে সরবরাহ করা হয়েছে।

এ মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক পরিচয়দানকারী নাঈম আহম্মেদ জুলহাস, সাবেক যুবলীগ নেতা ও প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার আবু সিদ্দিক, বর্তমানে নোয়াপাড়া গ্রুপের ডিজিএম মোশারফ হোসেন, সাবেক কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ও নোয়াপাড়া গ্রুপের উপদেষ্টা আশরাফুজ্জামান বাবু, বর্তমান ম্যানেজার আবুল কালাম, ফিল্ড সুপারভাইজার মো. হাবিল উদ্দিন, বিশেষ সহকারী টু এমডি শান্ত, নোয়াপাড়া গ্রুপের এমডি মো. সাইদুর রহমান লিটু। এছাড়া আরও ৫-১০ জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

আসামীরা এখনও রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। নোয়াপাড়া গ্রুপ থেকে দশ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী রফিক আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, মামলার তথ্যানুসন্ধান প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। তবে নোয়াপাড়া গ্রুপের যে অফিসে ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে, তার প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। কিন্তু এটি ধানমন্ডি থানার আওতাধীন হওয়ায় মোহাম্মদপুর থানার বেশিকিছু করার নেই। এছাড়া আল্লাহ করীম মসজিদের সামনে যে ঘটনার কথা বলা হয়েছে এজাহারে, সে বিষয়টি তদন্তকালে কিছু অসঙ্গতি মিলেছে। বিষয়টি নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। টাকা লেনদেনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। এ সময় তিনি দাবি করে বলেন, ওসি স্যার খুব ভালো মানুষ, তিনি এ মামলাটির তদন্ত সোজা ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করার নির্দেশনাও দিয়ে রেখেছেন।

নোয়াপাড়া গ্রুপের চেয়ারম্যান ফাইজুর রহমান বকুলও ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিত। তার ভাই ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইদুর রহমান লিটুসহ প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে ফোন করা হয়। তবে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেন। বিষয়টি জেনে জানাবেন বললেও পরে আর ফোন কল রিসিভ করেননি।

নোয়াপাড়া গ্রুপের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এ মামলার পরও তাদের মালিক এবং কর্মকর্তারা সচিবালয়, বিএডিসি ভবন ও অন্যান্য সরকারি দপ্তরে দাপটের সঙ্গে চলাফেরা করছেন। এখনও পর্যন্ত তারা কীভাবে জামিন ছাড়া প্রভাব খাটিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিংসিটিং করছেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

মামলার বাদী দাবি করেছেন- এরা শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরই নন, বরং ফ্যাসিস্টদের আয়-রোজগারের অন্যতম উৎস। আর এখনো তারা একচেটিয়া ব্যবসা চালিয়ে দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

১৫০ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন