গাজার ক্যাফেতে ইসরায়েলি হামলায় নিভে গেছে শিশু ও নারী বক্সারের জীবন প্রদীপ

শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫ ২:৩৫ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত বাস্তবতায়, যেখানে নিরাপদ আশ্রয় পাওয়া দুষ্কর, সেখানেই ছিল একটি ছোট সৈকত ক্যাফে—যেখানে মানুষ একটু স্বস্তি, ইন্টারনেট সংযোগ কিংবা মোবাইল চার্জ দিতে আসত।
গত সোমবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় এই ক্যাফেটি ধ্বংস হয়ে যায়। প্রাণ হারান অন্তত ৩৯ জন, যাদের মধ্যে ছিলেন এক বছরের ছোট্ট শিশু এবং একজন স্বপ্ন দেখা নারী বক্সার।
এই ক্যাফেটি ছিল অনেকের জন্য যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে সাময়িক মুক্তির জায়গা। এখানে পরিবার, বন্ধু, প্রতিবেশীরা একত্রিত হতেন; কেউ কেউ খাবার ভাগাভাগি করতেন, কেউ আবার ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু হঠাৎই, কোনো সতর্কতা ছাড়াই, যুদ্ধবিমান এসে আঘাত হানে—সব স্বপ্ন মুহূর্তেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
নিহতদের মধ্যে ছিল এক বছরের শিশু, যার ছোট্ট জীবন যুদ্ধের নিষ্ঠুরতায় শেষ হয়ে গেল। ছিলেন এক তরুণী মালাক মুসলে গাজার কনিষ্ঠ নারী বক্সার হিসেবে পরিচিত ছিলেন যিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বক্সিংয়ে অংশগ্রহণের স্বপ্ন দেখতেন। আরেকজন ছিলেন ইসমাইল আবু হাতাব গাজার একজন পরিচিত সাংবাদিক। সাংবাদিক, যিনি গাজার মানুষের কষ্ট, আশা ও সংগ্রামের গল্প বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতেন।
প্রত্যক্ষদর্শী আলি আবু আতেইলা বলেন,
“কোনো সতর্কতা ছাড়াই হঠাৎ যুদ্ধবিমান ক্যাফেতে বোমা ফেলে। পুরো জায়গাটা যেন ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে।”
এই হামলায় অনেকেই গুরুতর আহত হন, অনেকের দেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গাজার এই ক্যাফে ছিল টিকে থাকার শেষ আশ্রয়। এখন সেখানে শুধু ধ্বংসস্তূপ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মানুষের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, রক্তের দাগ আর স্বপ্নভঙ্গের নিদর্শন।
আলজাজিরা জানায়,
“এই ক্যাফেটি ছিল যুদ্ধের মধ্যে টিকে থাকা হাতে গোনা কয়েকটি স্থানের একটি, যেখানে মানুষ একটু স্বস্তি খুঁজে পেত।”
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এই হামলা শুধু নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়নি, পুরো সমাজের মনোবল ভেঙে দিয়েছে।
একজন মা বলেন,
“আমার মেয়ে শুধু খেলতে গিয়েছিল, এখন আমি শুধু তার ছবি দেখতে পাই।”
এই হামলার পর গাজার মানুষের মধ্যে আরও ভয়, ক্ষোভ ও অসহায়ত্ব ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে, গাজার সাধারণ মানুষের জীবন আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।
এই ঘটনা শুধু একটি ক্যাফে ধ্বংস নয়—এটি গাজার মানুষের স্বপ্ন, আশা ও বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষার ওপর আঘাত। তবুও, ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও গাজার মানুষের প্রতিরোধ ও বেঁচে থাকার ইচ্ছা এখনো টিকে আছে।
১২৭ বার পড়া হয়েছে