ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ২৪ শতাংশ ছাড়ালো

সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫ ৩:২৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের প্রকৃত অবস্থা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকায়, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্লেষক ও খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানো এবং নিয়মনীতি কঠোরভাবে প্রয়োগের ফলে এতদিন ‘ভালো’ বা ‘নিয়মিত’ হিসেবে বিবেচিত অনেক ঋণ এখন প্রকৃত অর্থে মন্দ ঋণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। এর ফলে রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে বিতরণ করা বিতর্কিত ঋণগুলোও সামনে আসছে।
গত ডিসেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে তা বেড়ে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমানে ব্যাংক খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা অনাদায়ী অবস্থায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই চিত্র ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকিকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরলেও তা অর্থনীতির জন্য এক অস্বস্তিকর বাস্তবতাও বটে।
২০২৪ সালের মার্চ শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা সে সময়ের মোট ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা— যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তিনটি কিস্তি পেলেও বাকি কিস্তিগুলো নির্ভর করছে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণের ওপর। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো—২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশ এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। অন্যদিকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোতে তা ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময় দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। পরবর্তী বছরগুলোতে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রভাব এবং দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে ঋণ বিতরণে অনিয়ম বাড়ে বলে অভিযোগ রয়েছে। অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন, এবং অনেকেই মনে করেন, এসব ঋণের বড় অংশই পাচার হয়ে গেছে বিদেশে।
১১৯ বার পড়া হয়েছে