ব্যাংকের ৬ জন অসুস্থ হওয়ার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ

সোমবার, ২ জুন, ২০২৫ ৭:৩৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে আইএফআইসি ব্যাংকের একটি উপশাখায় ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারী একসঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাটি ঘিরে নতুন করে রহস্য দানা বেঁধেছে।
পুলিশ আজ সোমবার সকালেই ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে এবং তা বিশ্লেষণ করে তারা ঘটনাটিকে এখন আর নাশকতা বা ডাকাতি বলে মনে করছে না।
ঘটনা ঘটে গতকাল রোববার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে। ফুটেজে দেখা যায়, বেলা ১টার কিছু আগে কয়েকজন গ্রাহক ব্যাংকে প্রবেশ করে লেনদেন শেষে চলে যান। এরপর ব্যাংকে আর কোনো গ্রাহক না থাকাকালীন সময়েই হঠাৎ হিসাব বিভাগের কর্মী হোসনা রহমান অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বমি করতে থাকেন। পরপর আরও পাঁচজন কর্মচারী একইভাবে আক্রান্ত হন। তাঁদের মধ্যে দুজন নারী।
ফুটেজ অনুযায়ী, কেউ কেউ অর্ধ-অচেতন অবস্থায় বাইরে যেতে চেষ্টা করেন, কিন্তু শাখা ব্যবস্থাপক সৌমিক জামান খানসহ দুজন চেয়ার ছেড়েও উঠতে পারেননি। তাঁদেরও বমি করতে দেখা যায়। তুলনামূলকভাবে সচেতন ছিলেন নিরাপত্তাকর্মী কামাল হোসেন, যিনি ধীরে ধীরে ক্যাশ কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গিয়ে ফোন ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফোন ধরতে গিয়ে তিনি কাচ ভেঙে ফেলেন।
পরবর্তীতে এক গ্রাহক ব্যাংকে প্রবেশ করলে কামাল তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। ওই গ্রাহক দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর আরেক নিরাপত্তাকর্মী জুয়েল মিয়া এসে অসুস্থ কর্মীদের বাইরে বের করে আনেন।
ঘটনার পর ব্যাংকের কার্যক্রম তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করা হয়। বাজিতপুর মূল শাখা থেকে কর্মকর্তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। তবে আজ সোমবার থেকে বিকল্প কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে ব্যাংকটির কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়েছে।
ভৈরব-কুলিয়ারচর সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নাজমুস সাকিব ও কুলিয়ারচর থানার ওসি হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে কোনো নাশকতা বা আর্থিক লোপাটের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ব্যাংকের ভল্ট এবং ক্যাশবক্স অক্ষত রয়েছে।
পুলিশের ধারণা, ব্যাংকের একটি বন্ধ ঘরে রাখা জেনারেটর থেকে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়ে থাকতে পারে। যদিও নিয়ম অনুযায়ী, জেনারেটরটি বাইরে রাখার কথা ছিল। ঘটনার দিন চার ঘণ্টা ধরে জেনারেটরটি চালু ছিল, যেটি গ্যাস নির্গমনের সম্ভাবনাকে জোরালো করছে।
সিআইডির ক্রাইম টিম ঘটনাস্থল থেকে খাবার, পানি, চা এবং বমির নমুনা সংগ্রহ করেছে। পরীক্ষার পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস নিঃসৃত গ্যাসের ধরন পরীক্ষা করছে।
জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাখা ব্যবস্থাপক সৌমিক জামান খান বলেন, “মাথা ঘুরাচ্ছিল, এরপর আর কিছু মনে নেই। কেউ স্প্রে করেছে, এমন কিছু চোখে পড়েনি, এবং ঘটনার আগে কিছু খাইওনি।”
এএসপি নাজমুস সাকিব বলেন, “খাবারের মধ্যে চেতনানাশক ছিল কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুত তদন্ত শেষে প্রকৃত কারণ জানানো হবে।”
উল্লেখ্য, হাবিব কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত এই উপশাখাটি গত তিন বছর ধরে বাজিতপুর শাখার অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে।
১২৯ বার পড়া হয়েছে