সর্বশেষ

জাতীয়

ট্রাফিক পুলিশের যে ‘জাদু’তে মোহাম্মদপুরে ভোগান্তির যানজট উধাও

মুন্সী তরিকুল ইসলাম, ঢাকা
মুন্সী তরিকুল ইসলাম, ঢাকা

শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫ ৭:৫৮ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
‘যানজট কমায় মোহাম্মদপুরের মানুষ কী পরিমাণ ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেয়েছে তা বলে বোঝানো যাবে না। কিছুদিন আগেও মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা পার হতেই কমপক্ষে আধাঘণ্টা সময় লাগতো, কখনো কখনো আরও বেশি। কিন্তু বর্তমানে আর গাড়ি থামাতেও হয় না। গতি একটু ধীর হলেও গাড়ি চলমান থাকে সবসময়।’

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সড়কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে এভাবেই স্বস্তি প্রকাশ করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আক্তারুজ্জামান। বসিলার বাসিন্দা আক্তারুজ্জামানকে কাজের প্রয়োজনে প্রায় প্রতিদিনই মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা অতিক্রম করে চলাচল করতে হয়। এ কারণে এই এলাকার যানজট কমায় খুব খুশি তিনি।

শুধু আক্তার নয়, মোহাম্মদপুরে বসবাসকারী তার মতো লাখো মানুষ রক্ষা পেয়েছে সড়কের এই ভোগান্তি থেকে। বর্তমানে এভাবে যানজট কমার কারণ জানতে চাইলে আখতার বলেন, সবচেয়ে বেশি যানজট হতো বেঁড়িবাঁধ সিগন্যালে। এখন দুই পাশে দুইটা ইউটার্ন চালু করায় সেই সিগন্যাল আর নাই। গাড়ি সবসময় চলমান। এছাড়া সড়ক দখল করে বসানো অবৈধ দোকানপাটও অনেক কমেছে। এ কারণে কমেছে যানজটও।

শনিবার (৩১ মে) সরেজমিনে মোহাম্মদপুর ঘুরে দেখা যায়, বেড়িবাঁধ সিগন্যাল লোহার কাঠামোর বেরিকেড দিয়ে পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। এ কারণে গাবতলী থেকে বাবুবাজারমুখী যানবাহনগুলো বসিলা রোডে ময়ূরভিলার সামনে থেকে ইউটার্ন নিয়ে চলাচল করছে। আর বাবুবাজার থেকে গাবতলীমুখী যানবাহনগুলো লাউতলা এলাকায় ইউটার্ন নিয়ে চলাচল করছে। আর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসিলামুখী ও বসিলা থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডমুখী যানবাহনগুলো সোজা চলাচল করছে। এ কারণে সবদিকের যানবাহন বিরতিহীনভাবে চলাচলে আর কোনো বাধা নেই। এছাড়াও বেড়িবাঁধ সিগন্যালের আশপাশে থাকা অবৈধ সিএনজি ও অটোরিকশার স্ট্যান্ডগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। একইসঙ্গে মোহাম্মদপুরে সড়ক দখল করে গড়ে তোলা মালঞ্চ পরিবহনসহ অন্যান্য বাসগুলোর স্ট্যান্ডও উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করায় সড়কের প্রশস্ততা বেড়েছে বেশ।

মোহাম্মদপুর সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী ময়ূখ হোসেন বলেন, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড মোড়ে যানজট অনেক কমেছে। তবে এখন নতুন উৎপাত হয়ে দেখা দিয়েছে ধুলাবালি ও কাঁদা। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে কাদা জমে আর রোদের সময় ধুলাবালি উড়ে। এর কারণ হলো ইউটার্নের এলাকাগুলোয় সড়কের পাশে কার্পেটিং করা নেই। এই জায়গাগুলো কার্পেটিং করে দিলে ধুলাবালি আর কাদার সমস্যা থেকেও রেহায় মিলতো।

এ বিষয়ে ট্রাফিকের তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আসলাম সাগর এইমাত্র অনলাইনকে বলেন, বসিলার যানজট কমাতে আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ট্রাফিকের তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার তানিয়া সুলতানার সাথে পরামর্শ করি। পরে আমাদের কিছু পরিকল্পনা আমরা বিভিন্ন বিভাগ যেমন- সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং সিটি করপোরেশনের সাথে শেয়ার করি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাস্তা কার্পেটিংসহ বিভিন্ন মিড আইল্যান্ড এবং ইউলুপ করে দেয়ার কথা থাকলেও করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। তারা জুন-জুলাইয়ে শুরু করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। পরবর্তীতে আমরা গত ৩ মে ট্রাফিকের তেজগাঁও বিভাগের উদ্যোগে সিমেন্টের ব্লক দিয়ে রাস্তায় অস্থায়ী মিড আইল্যান্ড স্থাপন করা হয় (বসিলা, গাবতলী, রায়ের বাজারের দিকে)। এছাড়াও ডিপিডিসি খনন করা রাস্তাও আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে ভরাট করি। যে সকল রাস্তা উঁচু-নিচু ছিল সেগুলো কিছুটা লেভেলিং করানোর ব্যবস্থা করা হয়। বেড়িবাঁধ কালভার্ট রোডে ইটের খোয়া ও রাবিশ দিয়ে কিছুটা পূরণ করা হয়, যাতে এই রোড দিয়ে ডাইভারশন দেয়া যায়। বসিলা ইউটার্নের আগে থানা ময়লার ডিপো সরিয়ে ফেলা হয় কয়েকবার। সিএনজি ও ইজি বাইকের স্ট্যান্ডকে সামনের দিকে সরিয়ে নেয়া হয়। এসব কারণে এখন বিরতিহীনভাবে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক থাকে। এখন বাসস্ট্যান্ড থেকে বসিলা এবং গাবতলী থেকে সদরঘাট যানজটমুক্ত অবস্থায় খুব অল্প সময়ে যাওয়া যায়।

তিনি বলেন, তবে এই প্রজেক্ট সফল হোক তা অনেকে চায় না, কারণ এই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে প্রতিনিয়ত হকার উচ্ছেদ করতে হয়, সিএনজি ও ইজিবাইককে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।

ট্রাফিক পুলিশ কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ দোকানদার, ইজিবাইক, সিএনজিচালকদের সাথে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হতে হচ্ছে। ময়ূর ভিলা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ করার পরও বার বার বসে যাচ্ছে। বসিলার দিকে ইউটার্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত ময়লা ফেলে রাখা হচ্ছে। একদিন খোদ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীকে ধরা হয়েছে ময়লা ফেলা অবস্থায়। উত্তর সিটি করপোরশেনকে বিষয়টি জানানোর পর সমাধান হচ্ছে না। এছাড়া রাস্তায় স্থায়ী কার্পেটিং না করার ফলে বৃষ্টির পানিতে কর্দমাক্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত বড় গাড়িগুলো কাদা এবং গর্তে ফেঁসে যাচ্ছে।

পুলিশ কর্মকর্তা আসলাম সাগর বলেন, বসিলা প্রজেক্টে যেখানে ইউটার্ন করা হবে সেখানে ইট ভাঙার কাজ চলমান থাকে, যার ফলে প্রচুর ধুলাবালি উড়ে বেড়ায়। এমতাবস্থায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারী পুলিশের জন্য কাজ করা খুব কষ্টকর হয়ে যায়। তাকে এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নে তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগ ও ডিএমপির পাশাপাশি স্থানীয় প্রতিনিধি, -বসিলা ক্লাবের সদস্যরা সহযোগিতা করছেন। আশাকরি খুব শিগগিরই এই এলাকার সড়কের পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে।

১৩৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন