সর্বশেষ

সারাদেশ

বাড়ি ফিরে ঈদের নামাজ শেষে ঘুমানোর কথা ছিল আরাফাতের

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫ ১০:২৩ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
ঈদ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে বেচাকেনার ব্যস্ততায় একদমই ঘুমাতে পারেননি কসমেটিকস দোকানের কর্মী হিসেবে কাজ করা আরাফাত হোসেন।

ভোরে গাড়িতে উঠার আগে মাকে ফোন করে বলেছিলেন, "মা, বিছানা তৈরি করো। আমি বাড়িতে এসে ঈদের নামাজ পড়ে ঘুমাব।" মায়ের প্রস্ততির কথামতো বিছানা প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আরাফাতের জীবনের গল্প মোড় নেয় অন্যদিকে। শেষ পর্যন্ত তাকে নিতে আসা অ্যাম্বুলেন্সটি অপেক্ষা করছিল বাড়ির উঠানে। তার নিথর দেহটি মায়ের যত্ন করে গুছানো বিছানায় নয়, বরং মাটির বিছানায় শোয়ানো হলো।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের আধার মানিক গ্রামে সবুজ ফসলি মাঠ ও পাহাড়ি এলাকার মাঝে এই ঘটনাটি ঘটেছিল। সোমবার সকাল ১১টার দিকে আরাফাতের লাশ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যখন পৌঁছায়, তখন গ্রামের মানুষ ছুটে আসে। কাঁধে নিয়ে চলতে শুরু করে আরাফাতের লাশ। কিছু সময় পরে নারীদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে, তারা জানতো না যে ঘুমানোর কথা বলে আরাফাত চিরদিনের জন্য ঘুমানোর জন্য চলে গেছেন।

সকাল সোয়া ৭টার দিকে আরাফাত (২১) ও রিফাত হোসেন (১৮) সহ মোট পাঁচজন যুবক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও মিনিবাসের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই পাঁচজনের মৃত্যু ঘটে এবং আরও ৯ জন আহত হন।

নিহতদের সবাই একে অপরের বন্ধু এবং তারা কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় দোকানে কাজ করছিলেন। ঈদ উদযাপনের জন্য গ্রামে ফিরছিলেন। পুলিশ জানায়, মিনিবাসটি কক্সবাজারের উখিয়া থেকে চট্টগ্রামের দিকে আসছিল এবং সৌদিয়া পরিবহনের বাসটির সাথে সে মুখোমুখি হয়ে সংঘর্ষ করে। স্থানীয় লোকজন সহায়তায় আহতদের উদ্ধার করতে চলে আসে লোহাগাড়া ফায়ার সার্ভিস।

আরাফাত ও রিফাতের এই দুঃখজনক মৃত্যুর ঘটনায় আধার মানিক গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঈদউৎসব স্থগিত হয়ে গেছে। গ্রামের মানুষ মুহূর্তেই খোঁজ পায় দুর্ঘটনার খবর, এবং তারা হতবাক হয়ে পড়ে।

মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আরাফাতের মা খুরশিদা বেগম অজ্ঞান হয়ে যান, যখন তিনি ছেলের নিথর দেহ দেখেন। আরাফাতের বাবা আব্দুল মোতালেব কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, ঈদের আগে আরাফাতের জন্য একটি বড় তরমুজ রেখে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, "আরাফাত ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে ঘুমানোর আশা করে ফিরছিল।"

রিফাতের ক্ষেত্রে, তার পরিবারের সদস্যরা আর্থিকভাবে অসচ্ছল। রিফাত স্থানীয় বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। দুর্ঘটনার আগে তার সঙ্গে বোনের কথা হয়েছিল এবং সে বলেছিল, "আপু, আমি খুব কাছে আসছি।”

শোকাহত এই পরিবারগুলো এবং নিহত অন্য তিন তরুণের পরিবারও একই ধরনের অসহনীয় দুঃখে ছিন্নভিন্ন। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, ঈদের দিন মহাসড়কে দুর্ঘটনাটি বেপরোয়া গাড়ির গতির কারণে ঘটেছে। এই ঘটনার পর গাড়ি দুটির বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার বিকল্প রয়েছে।

২০১ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন