সর্বশেষ

জাতীয়এনসিপি ছাড়লেন তাসনিম জারা ও খালেদ সাইফুল্লাহ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা
জামায়াতের সঙ্গে জোটে আপত্তি জানিয়ে নাহিদ ইসলামকে এনসিপির ৩০ নেতার চিঠি
কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার
ফিঙ্গারপ্রিন্টের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তারেক রহমানের এনআইডি প্রস্তুত: ডিজি
শহীদ ওসমান হাদির কবরে শ্রদ্ধা জানালেন তারেক রহমান
২৯ ডিসেম্বরের আগেই জামায়াত–এনসিপির আসন সমঝোতা চূড়ান্ত
দেশজুড়ে বাড়ছে শীত, যশোরে তাপমাত্রা নেমেছে ৯ ডিগ্রিতে
সারাদেশঘন কুয়াশায় টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে দুই বাসের সংঘর্ষ, আহত ২২
সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজে ভয়াবহ আগুন, এক কর্মচারীর মৃত্যু
আন্তর্জাতিকসোমালিল্যান্ড স্বীকৃতি প্রত্যাহারে ইসরায়েলের প্রতি কঠোর আহ্বান সোমালিয়ার
খেলাঅনুশীলনের সময় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ঢাকার সহকারী কোচ
ফেবু লিখন

স্মৃতি লিখন : কবি সৈয়দ আব্দুস সাদিক

হাবীব চৌহান
হাবীব চৌহান

শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪ ৩:১৪ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
বর্ষীয়ান কবি সৈয়দ আব্দুস সাদিকের স্বপ্নের ছায়াশীতল বাসভবনে "তবুও বসবাস" গিয়েছিলাম রবিবার সকালে (২০ অক্টোববর)। সেখানে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে কবি গড়েছিলেন স্বপ্নের এই বাড়িটি। আর বাড়িটির নাম দিয়েছিলেন, তবুও বসবাস।

এ বাড়িতে বসেই কবি বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি শাখা উপ- শাখায় বিচরণ করতেন এবং নিয়মিত লিখতেন। আর কবি আড্ডা ও সাহিত্য আড্ডায় আমাদেরকে পাঠ করে শোনাতেন। কবি সব সময়ই বলতেন, এই শোন শোন একদিন কবি সাদিক থাকবে না, কিন্তু থাকবে তাঁর এই লেখা এবং বইগুলো। সেদিন তোমরাও স্মরণ করবে তাঁকে ! আজ আমার সাথে তোমাদের সখ্যতার কারণে একদিন বহু মানুষ তোমাদের কাছে আসবে, জানতে চাইবে। সেদিন সব বলে দিও!

কবি আমাকে ডাকতেন চৌহান বলে। আমি তাকে নানা ডাকতাম। কবি বাবলু জোয়াদ্দারের মামা তিনি। আর বাবলু জোয়াদ্দারকে আমি মামা ডাকতাম। সেই দিক ধরেই কবিকে নানা ডাকতাম।

কবি সাদিক আমাদের চেয়ে অনেক অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ। এমনকি তিনি আমার আব্বার চেয়েও বড় ছিলেন। আমার আব্বার সাথেও তাঁর খুব সু-সম্পর্ক ছিল। আব্বা মারা যাওয়ার পর একদিন কথা প্রসঙ্গে কবি আপ্লুত হয়ে বললেন তোমার আব্বা খুব ভালো মানুষ ছিলেন। এমন চরিত্রের মানুষের বড়ই অভাব। সমাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কবি কথাগুলো বলেন। তখন সবেমাত্র কবি সাদিকের তবুও বসবাস নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। গাছপালা নেই বাড়িতে। আমের মৌসুম তখন। আমাদের বাড়িতে অনেক আমের গাছ আছে, প্রচুর আমও হয়।

একদিন সকালে আব্বা ব্যাগ ভর্তি আম কবিকে দিতে গেছেন। এ প্রসঙ্গে কবি বললেন, আমি তোমার আব্বাকে বলেছিলাম আপনি কষ্ট করে আম এনেছেন ! কি দরকার ছিল । কিন্তু তোমার আব্বা বললেন, আপনার বাড়িতে তো এখনো আম গাছ বড় হয়নি। তাই এগুলো নিয়ে এসেছি।

আমরা প্রতিদিনই কবি লিটন আব্বাসকে ঘিরে (রশীদ সুপার মার্কেট, ২য়তলা) বসে আড্ডা দিই। আর সেখানে কবি সাদিকও নিয়মিত যেতেন। কবির সাথে আমাদের সময় কাটানোটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের। একদিন দুইদিন, এক সপ্তাহ দই সপ্তাহ, একমাস দুইমাস, একবছর দুইবছর করে অনেক বছর আমরা নিয়মিত আড্ডা দিয়েছি। সে কারণে কবি মহাশয় আমাদের ঘনিষ্ঠজন থেকে অতি ঘনিষ্ঠজনে পরিণত হয়েছিলেন।

কবি আমাদেরকে একসাথে পেয়ে যাওয়া মানেই প্রাণ ফিরে পেতেন। তখন আর মনে হতো না তিনি আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠ বা আমরা তাঁর বয়োকনিষ্ঠ। কখনো কখনো কবি আমাদের নাম উচ্চারণ করে বলতেন, (লিটন, চৌহান কিংবা সিদ্দিক, রেজা,শরিফ) প্রাণভরে আড্ডা দিলাম গো আজ।

আমরা কবিকে নানাকিছু দিয়ে আপ্যায়ণ করতাম। মাঝে মাঝে কবিও পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলতেন, টাকা পয়সার টানাটানি চলছে গো ! আলাউদ্দিন সাহেব নেহাত ভালো মানুষ তাই আমার মতো একজন বুড়োকে ওখানে বসিয়ে রেখে কিছু টাকা দিচ্ছে। না দিলে তার কি ক্ষতি হতো? আলাউদ্দিন সাহেবের টাকাটা খুব কাজে লাগে। এভাবেই আরো কতো কি যে বলতেন কবি!

আড্ডা শেষে কবি জিজ্ঞেস করতেন, চৌহান তুমি কি বাড়িতে যাবে? যদি বলতাম হুম। তাহলে ভীষণ খুশি হতেন। তখন রসিকতা করে আমিও বলতাম বেশি খুশি হওয়ার দরকার নেই। আমিতো যাবো আমার বাড়ি। আপনার বাড়ি তো আমার বাড়ির পরে! তাহলে কি হবে! তখন বলতেন, তোমার পিছনে চড়েই গল্প শুরু করবো আর শেষ করবো আমার বাড়ির গেটের সামনে গিয়ে! তারপর তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় জানাবো। আমি বুড়ো হয়ে গেছি। আমাকে তুমি নিয়ে যাবে আর আমি তোমাকে কিছু দিবো না, তা কি হয়! তোমার জন্য অনেক দোয়া করবো। আর দোয়া করতেও হবে না, আপনা আপনিই তুমি পেয়ে যাবে একজন অসহায় বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষকে সহযোগিতা করার কারণে।

তখন আমি তাঁর কাছে বলতাম, আমি যেন আপনার বয়সটা ছুঁইতে পারি। সেই দোয়া করবেন আমার জন্য। এটা কি সম্ভব! তিনি হেঁসে বলতেন, এটা শুধু আমি কেন, কেউই বলতে পারবে না। তবে তোমার যেহেতু ইচ্ছে আমার মতো বয়স পাওয়া, আর তুমি মানুষের জন্য কাজ করে বেড়াও।সৃষ্টিকর্তা সব শুনছেন পান এবং জানেন আমাদের কথা।তিনি তোমার আকাঙ্খা পূরণ করতেও পারেন।
এভাবে গল্প করতে করতে পৌঁছে যেতাম কবির বাড়ির গেইটে। সেখানে নেমেই টানাটানি শুরু করতেন ভিতরে নিয়ে যেতে। বলতেন আমি জানি না তোমার নানী কি রান্না করেছে। যাই থাকুক একটু খেয়ে যাবে চলো। আমি মুখে না এবং ঘাড় ঝাঁকিয়ে বিদায় নিতাম।

এইতো কিছুদিন আগেও আমরা গিয়েছিলাম দানবীর শিক্ষানুরাগী ও শিল্পপতি ড. আলাউদ্দিন আহমেদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে।
সেখানে অনুষ্ঠান শেষে কবি লিটন আব্বাস, গুণী সংগীত শিল্পী মানিক, শিল্পী ও সংগঠক রেজ ভাই সহ আলাউদ্দিন আহমেদ শিশুপার্কের পাশেই একটু চা -চক্র করে আমি আর কবি সৈয়দ আব্দুস সাদিক দু'জনে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিই। বাইকে াসতে আসতে কথা হলো আমার বাড়িতে কিছু সময় কাটাবো।
মাত্র কয়েক কিলোমিটারের দূরত্ব। তবে কুষ্টিয়া -রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কটি বর্তমানে অনেক ব্যস্ততম সড়ক। তাই ----। ইতোমধ্যে পৌঁছে গেলাম আমার বাড়ির গেটে। কবি আমাদের বাড়ির গেট অতিক্রম করে বিতরে প্রবেশ করেই যেন চিৎকার করে বলে উঠলেন ! আরে চমৎকার জায়গা ! এখানেই তো সাহিত্য আড্ডার মনোরম পরিবেশ! আম বাগানের পাশে বিলেতি গাব গাছের সংলগ্ন সুপারি গাছের তৈরি মাচায় বসে অনেক কথা হলো।

কবি বললেন চৌহান, আর কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। তুমি আয়োজন করো আমরা আসবো। তোমার এখানে ঘুরবো, লিখবো আর পাঠ করবো। সবাইকে বলে দাও তোমার বাগানেই সাহিত্য আড্ডা করবো।

আমিও কবিকে বললাম নানা আমিও আর বাহিরে সময় ব্যয় করতে চাই না। তাই ধীরে ধীরে সবকিছু থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছি। সবশেষে ভোরের কাগজ ছেড়ে দিবো। এখন বাড়িতে সময় দিতে হবে বেশি।

সাদিক নানা বললেন, চৌহান তুমি সবকিছু ছেড়ে দিলেও পাবলিক লাইব্রেরী থেকে দুরে চলে যেওনা। তুমি মীর আমজাদ আলীর সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ ছিলে, এখনো আছো। তোমার আন্তরিকতা দেখেছি তুমি থেকো সব সময় লাইব্রেরীর সাথে। লাইব্রেরী জ্ঞানের ভান্ডার। তুমি বই না পড়লেও অন্যদের জন্য পড়ার ব্যবস্থাটা যেন চালু থাকে, সেদিকে নজর দিও। তাহলে তোমার জন্য মঙ্গল হবে।

আর লিখতে শুরু করো। সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে কিন্তু তোমার লেখা নষ্ট হবেনা। আমার কথা একবার ভাবো আমি কে? কি যোগ্যতা আছে আমার! সমাজে অনেক ছোটরা নেতৃত্ব দেয়, ওদের সামনে আমাকেও বসে হুজুর হুজুর করতে হয়। এটা কিন্তু খারাপ লক্ষণ! বদমায়েশ আর অযোগ্যদের হুজুর হুজুর করাটা কিন্তু সমাজের জন্য খারাপ। তুমি তো সবই জানো এবং বোঝো। তাই কিছু সৃষ্টি করে রেখে যাও।

কবি সাদিক নানা পারিবারিক কথাও আমাদের সাথে আলোচনা করতেন। ছোট ছেলেটাকে নিয়ে বলতেন আমি না থাকলে ওকে কে দেখবে? দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতেন, এটাই বড় দুশ্চিন্তা আমার। সহধর্মিণীকে খুব ভালো চোখে দেখতেন। বলতেন জানো তোমার নানী অনেক বড় বাড়ির মেয়ে। আমিও কম না।

আজ প্রিয় সাদিক নানা নেই! দুর অজানার বাসিন্দা হয়ে গেছেন। চিরবিদায় নিয়েছেন তিনি। আর কখনোই ফিরে আসবেন না আমাদের আড্ডায়। আজও লিটন ভাই বলছিলেন সাদিক নানা কই? তাঁর যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না সাদিক নানা আর নেই !

লেখক: হাবীব চৌহান, সাংবাদিক

(লেখাটি তাঁর ফেসবুক থেকে সংগৃহিত)

৮০৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন














সর্বশেষ সব খবর
ফেবু লিখন নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন