তাইওয়ানে চীনের লাইভ-ফায়ার সামরিক মহড়া, উত্তেজনা চরমে
সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৬:৫৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
তাইওয়ানের আশপাশে সোমবার সরাসরি গোলাবর্ষণসহ ব্যাপক সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন।
বেইজিং জানিয়েছে, এ মহড়ার উদ্দেশ্য হলো স্বশাসিত দ্বীপটির গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলোর কাছে সম্ভাব্য অবরোধ তৈরির সক্ষমতা যাচাই করা। তবে এই পদক্ষেপকে ‘সামরিক ভীতি প্রদর্শন’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তাইওয়ান।
চীন দীর্ঘদিন ধরেই তাইওয়ানকে নিজেদের সার্বভৌম ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করে আসছে এবং প্রয়োজনে সামরিক শক্তি ব্যবহারের হুমকিও দিয়ে থাকে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেওয়ার পরপরই বেইজিং এ সামরিক মহড়া শুরু করায় আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
চীনা কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, তাইওয়ানের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের কাছে সামুদ্রিক লক্ষ্যবস্তুকে কেন্দ্র করে ‘লাইভ-ফায়ার প্রশিক্ষণ’ চলছে। এতে ডেস্ট্রয়ার ও ফ্রিগেটসহ নৌযান, যুদ্ধবিমান, বোমারু বিমান এবং ড্রোন অংশ নিচ্ছে।
এর আগে চীনের এক সামরিক মুখপাত্র জানান, ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও রকেট ফোর্সের সমন্বয়ে একটি বড় পরিসরের যৌথ মহড়া পরিচালনা করা হবে। পিপলস লিবারেশন আর্মির ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের সিনিয়র কর্নেল শি ই বলেন, এ মহড়ার লক্ষ্য সমুদ্র ও আকাশে যুদ্ধ প্রস্তুতি জোরদার করা, যৌথভাবে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও এলাকার অবরোধ সক্ষমতা যাচাই এবং প্রতিরোধমূলক অবস্থান নেওয়া।
চীন এ উপলক্ষে একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে তাইওয়ানের চারপাশে পাঁচটি বড় এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। মানচিত্র অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অতিরিক্ত লাইভ-ফায়ার কার্যক্রম চলবে। নিরাপত্তার কারণে সংশ্লিষ্ট জলসীমা ও আকাশপথ এড়িয়ে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তাইওয়ানের প্রেসিডেনশিয়াল অফিসের মুখপাত্র কারেন কুও বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম উপেক্ষা করে প্রতিবেশী দেশগুলোকে ভয় দেখানো চীনের এই আচরণ নিন্দনীয়। তাইপে জানিয়েছে, সোমবার তারা উত্তর ও পূর্ব উপকূলে চারটি চীনা কোস্টগার্ড জাহাজ শনাক্ত করেছে।
তাইওয়ানের কোস্টগার্ড জানায়, সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় বড় জাহাজ মোতায়েনসহ অতিরিক্ত সহায়ক ইউনিট পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনী একটি প্রতিক্রিয়া কেন্দ্র স্থাপন করে দ্রুত সাড়া দেওয়ার প্রস্তুতিমূলক মহড়া চালিয়েছে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, এসব সামরিক তৎপরতা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আগ্রাসী মনোভাবকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। তাইওয়ান মনে করে, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠেছে চীন।
অন্যদিকে চীনের সেনা মুখপাত্র শি ই দাবি করেন, এ মহড়া তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা এবং চীনের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্য রক্ষায় এটি একটি বৈধ পদক্ষেপ।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিসিটিভি জানায়, মহড়ার অন্যতম লক্ষ্য ছিল তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলো-উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়াং- অবরোধের সক্ষমতা যাচাই।
উল্লেখ্য, গত এপ্রিলেও তাইওয়ানের চারপাশে সরাসরি গোলাবর্ষণসহ বড় ধরনের সামরিক মহড়া চালিয়েছিল চীন। চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদনের পর বেইজিং ঘোষণা দেয়, নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষায় তারা আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।
১১৯ বার পড়া হয়েছে