ইটভাটায় শিশুশ্রম: ১০ বছরের শিশুরাও মজুরির বিনিময়ে করছে ভারী কাজ
মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৭:৫২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ঢাকার ধামরাই উপজেলায় একাধিক ইটভাটায় ১০-১২ বছর বয়সী শিশুদের ভারী শ্রম করতে দেখা যাচ্ছে।
শিশু শ্রমিকরা সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে কাজ শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করে, মাঝে কেবল খাওয়ার বিরতি নেয়। ছয় মাসের চুক্তিতে তারা পায় মাত্র ২৬ হাজার টাকা, যা প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকের এক মাসের বেতনের চেয়ে কম।
ধামরাই উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় শিশুরা মাটি-বালু বহন, কাঁচা ইট তৈরি এবং ইট সাজানোর মতো শারীরিকভাবে কঠোর কাজ করে। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, ১৪ বছরের কম বয়সীদের কাজ করা নিষিদ্ধ। ১৪–১৮ বছরের কিশোর-কিশোরীরা কেবল হালকা কাজ করতে পারে। তবে বাস্তবে এই আইন কার্যকর হচ্ছে না।
ইটভাটা মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার প্রায় ১৮২টি ইটভাটার মধ্যে ১২০টির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে। প্রতিটি ভাটায় ২৫০-৩০০ শ্রমিক কাজ করে, তবে কত শিশু কাজ করছে তার সঠিক তথ্য নেই।
সরাসরি মাঠপর্যায়ে গিয়ে দেখা যায়, ভারারিয়া ইউনিয়নের পাড়াগ্রাম এলাকায় এবং রোয়াইল ইউনিয়নের খড়ারচর এলাকার ভাটাগুলোতে একাধিক শিশু প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা কাজ করছে। অনেকের বয়স মাত্র ১০-১২ বছর। শিশুদের মধ্যে কিশোরেরা ছয় মাসে ৫০ হাজার টাকার চুক্তিতে কাজ করছে।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ২০২৫ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, ইটভাটায় কাজ করা শিশুরা প্রতিদিন ধুলো, তীব্র তাপ এবং ভারী কাজের ঝুঁকিতে থাকে। এর ফলে হাঁপানি, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, ত্বকের রোগ, পেশির ব্যথা, মেরুদণ্ড বিকৃতি এবং পুষ্টিহীনতার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, 'শিশু শ্রমের মূল কারণ দারিদ্র্য। একই কাজের জন্য শিশুকে কম মজুরি দেয়ার কারণে তারা শোষিত হচ্ছে। মালিকদের সচেতন হতে হবে এবং রাষ্ট্রকে পুনর্বাসনে এগোতে হবে।'
ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আহমেদুল হক তিতাস জানান, 'ইটভাটার পরিবেশ শিশুদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ধুলো ও ধোঁয়া শ্বাসকষ্ট থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত ঝুঁকি তৈরি করে।'
ঢাকা জেলা প্রশাসক ও জেলা শিশু শ্রম মনিটরিং কমিটির সভাপতি মোঃ রেজাউল করিম বলেন, 'শিশু শ্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যেখানে শিশু শ্রম রয়েছে, তা শনাক্ত করে পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'
১৬৩ বার পড়া হয়েছে