বিদ্যুৎ লাইনের নিরাপত্তার নামে নওগাঁ বাইপাসে ৭৫০ তালগাছ ন্যাড়া, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা
শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৫:৩২ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
নওগাঁ বাইপাস সড়কের দুই পাশে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ৭৫০টি তালগাছের মাথা ও ডালপালা কেটে ন্যাড়া করে দিয়েছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)।
বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অজুহাতে এ কাজ করা হলেও এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নওগাঁ বাইপাস সড়কের রামভদ্রপুর থেকে বটতলী বোয়ালিয়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় থাকা কয়েক হাজার তালগাছের মধ্যে দুই পাশের প্রায় ৭৫০টি গাছ সম্পূর্ণ ন্যাড়া করে ফেলা হয়েছে। গাছগুলোর উচ্চতা প্রায় ১০ থেকে ১২ ফুট। গাছের খুব কাছ দিয়েই স্থাপন করা হয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি ও ৩৩ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক লাইন। ফলে সড়কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এসব তালগাছের বয়স প্রায় ২০ থেকে ৩০ বছর। স্থানীয় কয়েকজন উদ্যোগী মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে তালের বীজ সংগ্রহ করে সড়কের দুই পাশে রোপণ করেছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব গাছ সড়কটির সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি বজ্রপাত প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিল। কিন্তু ডালপালা কেটে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ায় গাছগুলো ধীরে ধীরে মরে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এর আগেও এভাবে ডাল কাটার ফলে কিছু গাছ মারা গেছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন আগেও গাছ ন্যাড়া করেছে, তখনই কিছু গাছ মরে গেছে। আমরা প্রতিবাদ করলেও তারা শোনে না। প্রশাসনের লোকজন সঙ্গে নিয়ে নির্বিচারে গাছ কাটে। শুধু এই সড়ক নয়, গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় একই চিত্র।”
আরেক বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, “এই গাছগুলো একদিনে বড় হয়নি। বিদ্যুতের খুঁটি দুই-তিন হাত সরিয়ে নিলেই গাছগুলো বাঁচানো যেত। কিন্তু তা না করে পরিকল্পিতভাবে গাছের ক্ষতি করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”
এ বিষয়ে পরিবেশকর্মী নাইস পারভীন বলেন, “নওগাঁ জেলায় প্রতিবছর বজ্রপাতে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। তালগাছ বজ্রপাত রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সরকার যেখানে তালগাছ লাগানোর উদ্যোগ নিচ্ছে, সেখানে নেসকো গাছ ন্যাড়া করে পরিবেশ ধ্বংস করছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ না হলে আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।”
তবে নেসকো দক্ষিণের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিলন মাহমুদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এটি আমাদের নিয়মিত রুটিন কাজ। গাছগুলোর ওপর দিয়ে ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইন রয়েছে। ঝড়-বৃষ্টির সময় গাছের সঙ্গে তারের সংঘর্ষ হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেই ঝুঁকি এড়াতেই গাছের ডাল ও মাথা কাটা হয়েছে।”
এ ঘটনায় স্থানীয়দের দাবি, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরাপদ রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে গাছ রক্ষা করা যেত। তা না করে শত শত তালগাছ ন্যাড়া করে পরিবেশ ও সৌন্দর্য ধ্বংস করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে বড় প্রাকৃতিক ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে।
১০৪ বার পড়া হয়েছে