জাতির উদ্দেশে ভাষণ: ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট
বৃহস্পতিবার , ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:২০ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন।
ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত গণভোট- দুইটিই একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। ভোট চলবে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত।
সিইসি জানান, এবার দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখের বেশি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যও ডাকযোগে ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে; ইতিমধ্যেই তিন লাখের বেশি প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন।
তিনি জানান, আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ভোট উৎসব হবে। এদিন ৩০০ আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে গণভোট হবে।
সিইসি আরও জানান, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন ১২ ডিসেম্বর থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই করা হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি।মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে প্রার্থীদের আপিল ১১ জানুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি করা হবে ১২ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। রিটার্নিং কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করবে ২১ জানুয়ারি এবং ওইদিন প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। নির্বাচনি গণসংযোগ ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তথা নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত। ভোট ১২ জানুয়ারি।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। প্রায় ১৬ মাস পর এসে নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করা হলো।
নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও আলোচনাও ছিল আলোচনায়। গত জুনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে হবে। পরে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর সময়সীমা এগিয়ে এনে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে করার বিষয়ে সম্মতি হয়। এরপর থেকেই সরকার জানাতে থাকে, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই ধারাবাহিকতায় ইসি প্রস্তুতি নেয় এবং আজ চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঘোষণা করল।
সিইসি জানান, ইসির নিবন্ধিত ৫৬টি দল দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। তবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগের নিবন্ধন এখনো স্থগিত, ফলে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। নিবন্ধিত অন্যান্য দল অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি যোগ্য কোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।
ইসি জানিয়েছে, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট আয়োজন একটি বড় প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। সময় ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে এবার এক ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে সরকার। তফসিল ঘোষণার পর সশস্ত্র বাহিনীসহ নিরাপত্তা সংস্থার প্রায় ৯ লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে—যা দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ইতিমধ্যেই রেকর্ডসংখ্যক দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ২১ নভেম্বর এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। আসন্ন নির্বাচন ও গণভোটই হবে এই কমিশনের অধীনে প্রথম জাতীয় ভোট আয়োজন।
১৩০ বার পড়া হয়েছে