মানিকগঞ্জে ঢেঁকিছাঁটা চালের উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া
বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১১:১২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কান্দারিয়া এলাকায় ঢেঁকিছাঁটা চালের উৎপাদনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে।
জেলায় দীর্ঘদিন হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি এখন আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ফিরছে। স্থানীয় উদ্যোক্তা আক্তার হোসেন (৫২) দুটি বৈদ্যুতিক ঢেঁকি স্থাপন করে স্বাদে স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ লাল চাল উৎপাদন শুরু করেছেন।
প্রথমে নিজের ব্যবহার ও স্বাস্থ্যজনিত কারণে উৎপাদন শুরু করেন আক্তার। ২০২০ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসকের পরামর্শে লাল চাল খেতে হয়, কিন্তু বাজারের চালের পলিশ ধুয়ে রং উঠে যেত। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে তিনি নিজের ঢেঁকিঘর স্থাপন করেন। পরে প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়িক উৎপাদন শুরু হয়।
ঢেঁকিঘরের ম্যানেজার জুসন আলী জানান, এখানে ভাওয়াইলা জাতের আমন ধান এবং কাঁলো মানিক আউশ ধানের চাল উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ মণ ধান থেকে চার মণ চাল তৈরি হচ্ছে। চাহিদা উৎপাদনের চেয়ে বেশি হওয়ায় ঢেঁকিঘরে ক্রমবর্ধমান অর্ডার আসছে।
ডাঃ এ.বি.এম তৌহিদুজ্জামান সুমন বলেন, বাজারের সাদা চালের মধ্যে অনেক সময় ক্ষতিকর কেমিক্যাল থাকে, কিন্তু ঢেঁকিছাঁটা চাল সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর। বিশেষ করে এতে ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও হার্টের জন্য উপকারী।
ঢেঁকিঘরের ম্যানেজার জুসন আলী বলেন, আমাদের এই ঢেঁকিঘরে ভাওয়াইলা জাতের আমন ধান ও কাঁলো মানিক নামের আউশ ধানের চাল উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ মণ ধানে প্রায় চাঁর মণ চাল তৈরি হয়। বর্তমানে উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশী। ওই ঢেঁকিঘরের আরো এক নারীকর্মী মনোয়ারা বেগম বলেন, মা-দাদিরা ঢেঁকিতে চাল তৈরি করতো কষ্ট করে,সেই দিন-তো আর নাই। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঢেঁকি চলছে আর ঢেঁকিতে চাল তৈরির কারণে দূরদূরান্ত থেকে অর্ডার আসছে।
উদ্দোক্তা ঢেঁকিঘরের আক্তার হোসেন বলেন, বেশ কযেক বছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি আমি। ডাক্তার নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি লাল চালের ভাত খাওয়ার পরামর্শ দেন। বাজার থেকে লাল চাল কিনে রান্না করতে গেলে চালের উপর পলিশ করা রং উঠে যেতো। এই সমস্যার কারণে অনেক দোকান বদলিয়েছি কিন্তু কোন লাভ হয় নি। পরে বাধ্য হয়েই নিজের খাওয়ার জন্য এই বৈদ্যুতিক ঢেঁকি স্থাপন করি। প্রথম দিকে প্রতিবেশীরা পাগলামি বললেও পরে প্রশংসাও করছে। শুরুতে নিজের জন্য হলেও পরে চাহিদা বাড়ায় বানিজ্যিক বানিজ্যিক ভাবে শুরু করেছি চাল উৎপাদন।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ এ.বি.এম তৌহিদুজ্জামান সুমন বলেন, বাজারের সাদা চালের মধ্যে অনেক ক্যেমিক্যাল থাকে যা কিনা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। তবে ঢেঁকিছাঁটা চালে ( ক্ষতিকারক) এই প্রভাব নাই আর এ চালে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি রয়েছে ।
বিসিক মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক আব্দুল কাদের বলেন, বাজারের চালের চেয়ে ঢেঁকিছাঁটা চালের উপকারীতা অনেকাংশেই বেশী। এটার প্রচার ও প্রসারটা বাড়ানো গেলো উদ্দোক্তারা বানিজ্যিক ভাবে লাভবান হবেন এবং বিসিকের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
১১২ বার পড়া হয়েছে