শীতের মৌসুমেও নিত্যপণ্যের বাজারে অস্বস্তি
সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৪:৪১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
শীতের ভরা মৌসুমেও নিত্যপণ্যের দাম কমার বদলে উল্টো বেড়ে চলেছে। সবজি, আলু, পেঁয়াজসহ প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় সাধারণ ভোক্তার দুশ্চিন্তা আরও বাড়ছে।
এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই), যেখানে দেখা যাচ্ছে অক্টোবরের ৮.১৭ শতাংশ থেকে নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি আবার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮.২৯ শতাংশে।
গত কয়েক মাস ধরে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে এলেও তা এখনও ৮ শতাংশের নিচে নামছে না। গত বছরের নভেম্বরেও পরিস্থিতি ছিল আরও কঠিন; তখন মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছিল ১১.৩৮ শতাংশে, আর জুলাইয়ে তা ছাড়িয়েছিল ১১.৬৬ শতাংশ। চলতি বছরের অক্টোবরেই ৩৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ৮.১৭ শতাংশে নেমে এলেও নতুন তথ্য বলছে, এই নিম্নগতি স্থায়ী হয়নি।
বিবিএসের তথ্যে জানা যায়, খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি নভেম্বর মাসে বেড়ে হয়েছে ৭.৩৬ শতাংশ, যা অক্টোবর মাসে ছিল ৭.০৮ শতাংশ। টানা দুই মাস ধরে খাদ্য খাতে দাম বৃদ্ধির চাপ বিদ্যমান। যদিও গত বছরের তুলনায় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কম, তবে বাস্তব বাজারে সেই সুবিধা তেমন দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৯.০৮ শতাংশে।
শহর ও গ্রাম দুই অঞ্চলেই নভেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা বেড়েছে। গ্রামে তা দাঁড়িয়েছে ৮.২৬ শতাংশে এবং শহরে ৮.৩৯ শতাংশে।
এদিকে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি সেই হারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না। নভেম্বরে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৮.০৪ শতাংশ, যা সার্বিক মূল্যস্ফীতির তুলনায় কম, ফলে মানুষের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা আরও সংকুচিত হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, খাদ্য খাতে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিই সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চাপ তৈরি করছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, পাইকারি পর্যায়ে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা, খাদ্য আমদানিতে শুল্ক হ্রাস এবং কৃষিপণ্যের সরাসরি বিপণন ব্যবস্থা জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে প্রতিদিনের বাজারে সবজি ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকা অব্যাহত রয়েছে। পেঁয়াজের দাম দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৩০-৩৫ টাকা, আর দুই সপ্তাহে বাড়তি প্রায় ৭০ টাকা। শীতের সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম কমছে না; শিম, বেগুন, উচ্ছেসহ বেশির ভাগ সবজির দাম কেজিপ্রতি ৭০-১০০ টাকার মধ্যে ঘুরছে। কাঁচা মরিচের দাম কমলেও নতুন আলুর দাম কেজিপ্রতি ৮০-১০০ টাকা, যা ভোক্তাদের জন্য নতুন চাপ তৈরি করেছে।
সব মিলিয়ে টানা তৃতীয় বছরের মতো উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেশের অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে সুদের হার বৃদ্ধি ও শুল্ক হ্রাসের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বাজারে এখনও তার পর্যাপ্ত প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।
১১৯ বার পড়া হয়েছে