মেহেরপুর মুক্ত দিবস আজ: ১৯৭১ সালের বিজয়ের উজ্জ্বল স্মৃতি ফিরে দেখছে জেলা
শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২:৫৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
আজ মেহেরপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত প্রতিরোধের মুখে পরাজিত হয়ে জেলা ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুক্ত হয় ঐতিহাসিক মুজিবনগরসহ গোটা মেহেরপুর। বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা উড়ে ওঠে সর্বত্র।
মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তঝরা সংগ্রাম ও দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অর্জিত স্বাধীনতার সেই ভোর আজও মেহেরপুরের মানুষের স্মৃতিতে অমলিন। বিজয়ের সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই শহরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। কেউ স্বাধীনতার গান গেয়ে বেড়িয়েছে, কেউবা বাড়িতে বাড়িতে মিষ্টি বিলিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করেছে। নারী-পুরুষ, শিশুসহ সব বয়সী মানুষের চোখে ছিল স্বস্তির অশ্রু আর স্বাধীনতার গর্ব।
মেহেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্যসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ জানান, স্বাধীনতার যুদ্ধে এই জেলার মানুষ অসীম সাহস নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ভারতের প্রশিক্ষণ শিবিরে ট্রেনিং শেষে তারা দেশে ফিরে সংগঠিত হয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে নিয়মিত গেরিলা আক্রমণ চালান।
তিনি বলেন, ৫ ডিসেম্বর বিকেলেই মুক্তিযোদ্ধারা জেলার বিভিন্ন এলাকায় একযোগে আক্রমণ শুরু করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংঘর্ষটি হয় মেহেরপুর–কুষ্টিয়া সড়কের বামুন্দি এলাকায়, যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড হামলায় পাকিস্তানি সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুব হক জানান, নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করলে হানাদাররা ৫ ডিসেম্বর রাত থেকে কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার দিকে পিছু হটতে থাকে। খলিশাকুন্ডি হয়ে পালানোর সময় তারা আমঝুপি দ্বীনদত্ত ব্রিজ, ওয়াবদা অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করে যায়। পরদিন ৬ ডিসেম্বর সকালে মেহেরপুরে তাদের আর কোনো অস্তিত্ব ছিল না-সম্পূর্ণ মুক্ত হয় জেলা।
সেই দিনের স্মৃতি স্মরণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম কিবরিয়া বুলু বলেন, '৬ ডিসেম্বর ছিল আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জনের দিন। বিজয়ের আনন্দে আমরা প্রাণ খুলে উল্লাস করেছিলাম, আর সাধারণ মানুষও সেই উচ্ছ্বাসে যোগ দিয়েছিল। পুরো জেলা পরিণত হয়েছিল উৎসবের শহরে।'
তিনি আরও বলেন, দেশের জন্য জীবন বাজি রাখা যোদ্ধাদের প্রত্যাশা একটাই- একটি দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ।
মেহেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সামসুল আলম সোনা একই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে জানান, স্বাধীনতার অর্জন নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হলে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান, অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব।
১১০ বার পড়া হয়েছে