জনসংখ্যা বেড়েছে, ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় বড় শহর: উদ্বেগজনক রিপোর্ট
বৃহস্পতিবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৬:৩৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের স্থবিরতার প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত দুটি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় জরিপে বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরাসরি দেশের জনসংখ্যার ওপর আলোকপাত করেছে ইউনিসেফ ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তাদের ‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০২৫’ অনুযায়ী, দেশের মোট প্রজনন হার বা টোটাল ফার্টিলিটি রেট (টিএফআর) ২.৪-এ পৌঁছেছে। এর অর্থ, প্রতিটি মা গড়ে আগের তুলনায় বেশি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল এবং উদ্বেগজনক ঘটনা, কারণ টিএফআর দশক ধরেই ক্রমাগত কমে আসছিল। উদাহরণস্বরূপ, ২০১২ থেকে ২০২২ পর্যন্ত টিএফআর ২.৩-এ স্থিতিশীল ছিল।
অন্যদিকে, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (ইকোসক) ঢাকা শহরের জনসংখ্যার তথ্য প্রকাশ করে, যা বিশ্বে জনসংখ্যার দিক থেকে বড় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। ২৫ বছর আগে রাজধানী ঢাকা নবম অবস্থানে ছিল। বর্তমানে ঢাকা শহরে বসবাস করছে ৩ কোটি ৬৬ লাখ মানুষ, যা শহরের সীমিত অবকাঠামোর ওপর চরম চাপ তৈরি করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের স্থবিরতার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মাঠ পর্যায়ের ৫৪,৪২৬টি পদে ১৪,৯৮১টি খালি, অর্থাৎ প্রায় ২৮ শতাংশ পদ শূন্য। এছাড়া পরিবারকল্যাণ সহকারী, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক, সাব-অ্যাসিসট্যান্ট মেডিকেল অফিসার (সাকমো) এবং ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর (এফডব্লিউভি) পদে ৮,২৯৩টি খালি, যা সরাসরি পরিবার পরিকল্পনা সেবায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সরবরাহও কমে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, করোনার আগে প্রতি মাসে ৭০–৮০ লাখ সুখী বড়ি বিতরণ করা হতো, কিন্তু গত অক্টোবর মাসে মাত্র ১৯ লাখ ৪০ হাজার বড়ি বিতরণ হয়েছে। চট্টগ্রাম, খুলনা ও মৌলভীবাজারসহ কয়েকটি জেলার মাঠকর্মীরা জানিয়েছেন, আইইউডি, ইমপ্ল্যান্ট ও অন্যান্য জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সরবরাহ নেই বা অর্ধেকের কম।
সরকারের দীর্ঘমেয়াদি নীতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসংখ্যা নিয়ে ২০১০ সালের মন্তব্য, যেখানে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনসংখ্যা কোনো সমস্যা নয়’, তা পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে শিথিলতার সৃষ্টি করেছে। এ কারণে মাঠ পর্যায়ের কর্মী সংকট ও কার্যক্রমের ধীরগতি দেখা দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, টিএফআর আরও বাড়তে পারে এবং দেশের জনসংখ্যা চাপ আরও বেড়ে যাবে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে পরিবেশ, বনভূমি, জলাশয়, আবাসন, পরিবহন ও স্বাস্থ্যসেবায় চাপ বাড়ছে। শিশু অপুষ্টি এবং দারিদ্র্যও আরও প্রকট হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, 'বৃহৎ প্রশাসনিক শিথিলতা এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবে বর্তমান পরিস্থিতি সংকটময়। যদি টিএফআর ৩-এ পৌঁছায়, তা জাতীয় জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।'
সংক্ষেপে সব সংখ্যাতথ্য
১. দেশের মোট জনসংখ্যা: ১৮ কোটির বেশি
২. ঢাকার জনসংখ্যা: ৩ কোটি ৬৬ লাখ (বিশ্বে ২য়)
৩. মোট প্রজনন হার (টিএফআর): ২.৪
৪. মাঠপর্যায়ের পরিবার পরিকল্পনা পদ শূন্য: ২৮–৪৫%
৫. জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সরবরাহ কম: ৫০% কম বিতরণ।
১০৬ বার পড়া হয়েছে