হুন্দাইয়ের ‘অচল’ ইঞ্জিন, উচ্চমূল্যের নতুন চুক্তি স্থগিত: রেলওয়েতে দুদকের তদন্ত
সোমবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩:৩২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশ রেলওয়েতে লোকোমোটিভ কেনা ঘিরে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একাধিক মামলা ও অনুসন্ধান শুরু করেছে।
পূর্বে কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম থেকে কেনা অন্তত ৩০টি মিটার গেজ ডিজেল লোকোমোটিভের উল্লেখযোগ্য অংশ অল্প সময়ের মধ্যেই বারবার বিকল হয়ে পড়ায় এগুলোকে নিম্নমানের ও ‘অচল ইঞ্জিন’ হিসেবে অভিযোগ করেছে রেলওয়ে-সংশ্লিষ্ট মহল। একই সঙ্গে এই ক্রয়ে জাল কাগজপত্র, স্পেসিফিকেশন পরিবর্তন ও অতিমূল্যায়নের অভিযোগে সাবেক মহাপরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে একই হুন্দাই থেকে আবারও ৩০টি নতুন মিটার গেজ লোকোমোটিভ কেনার জন্য একটি উচ্চমূল্যের দরপত্র প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হচ্ছিল, যা রেলওয়ের অভ্যন্তরে বহুচর্চিত ‘ইঞ্জিন সিন্ডিকেট’–এর প্রভাবেরই ধারাবাহিকতা বলে অভিযোগ উঠেছে। সমালোচকদের দাবি, আগের বিতর্কিত ও ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন সরবরাহের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও একই গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে প্রকল্প ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে দ্বিগুণেরও বেশি ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে ধরা হয়েছিল। অর্থ মন্ত্রণালয় ও উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ হলে প্রকল্পটি আপাতত স্থগিত করে পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়, ফলে সিন্ডিকেট–কেন্দ্রিক এই চুক্তি সাময়িকভাবে আটকে গেছে।
লোকোমোটিভ ছাড়াও লাগেজ ভ্যান, সরঞ্জাম ও আঞ্চলিক ক্রয়ে অতিমূল্যায়ন, মানহীন পণ্য সরবরাহ এবং স্থানীয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কয়েক গুণ বেশি দামে তালা–বালতি ও যন্ত্রাংশ কেনার ঘটনাতেও দুদক ধারাবাহিকভাবে মামলা ও অনুসন্ধান চালাচ্ছে। রাজশাহী অঞ্চলে ১৮ কর্মকর্তা, লাগেজ ভ্যান প্রকল্পে সাবেক ডিজি ও একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং লোকোমোটিভ ক্রয়ে আরও কয়েকজনকে আসামি করে করা মামলাগুলো এখন আদালতে বিচারাধীন।
রেলওয়ে অভ্যন্তরীণ সূত্রের ভাষ্য, দুর্নীতিগ্রস্ত এই ‘ইঞ্জিন সিন্ডিকেট’ বহু বছর ধরে ক্রয়–বিভাগ, প্রকল্প পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক প্রভাবকে ব্যবহার করে ইঞ্জিনসহ বড় সব চুক্তি নিজেদের কবজায় রেখেছে। হুন্দাইয়ের নিম্নমানের ইঞ্জিন, একই নির্মাতার সঙ্গে উচ্চমূল্যের নতুন ৩০ ইঞ্জিনের দরপত্র এবং শেষ মুহূর্তে সরকারের হস্তক্ষেপে প্রকল্প স্থগিত হওয়া—এই তিনটি ঘটনা মিলেই রেলওয়ের দীর্ঘদিনের দুর্নীতি এখন প্রকাশ্যে এসেছে; দুদকের চলমান তদন্ত ও সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এই সিন্ডিকেট ভাঙার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
১২১ বার পড়া হয়েছে