শাহবাগের ‘স্যালুট-হিরো’ সুজন: সাধারণ থেকে সংসদের পথে
শুক্রবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৫ ৬:৪১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
২০২৪ সালের জুলাই, রাজধানী ঢাকায় উত্তাল গণঅভ্যুত্থান। শাহবাগের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে ইতিহাসের দৃঢ় ছবি হয়ে ওঠেন একজন সাধারণ রিকশাচালক- সুজন।
সেদিন তিনি নিজের রিকশা থামিয়ে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে স্যালুট জানিয়েছিলেন। সেই স্যালুটের দৃশ্য ভাইরাল হয় দেশজুড়ে; কোনো প্রভাবশালী নেতা বা তারকার মতো নয়, একজন রিকশাচালক স্যালুট দিয়েছিলেন জনতার সংগ্রামের সম্মানকে।
সুজন সেই পরিচিতি থেকেই একটি চরিত্রে রূপ নেন—রাজপথের আইকন, যিনি সমাজের সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। ধীরে ধীরে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়, সংবাদমাধ্যমে। দেশের নানা আন্দোলনের পাশে দেখা যায় তাঁকে, কেউ তাঁকে বলে গণ-জনতার মুখ, কেউ বলেন ‘শ্রমজীবী বিপ্লবী’।
২০২৫ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনীতির আওয়াজে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন বার্তা—এবার ঢাকা-৮ আসনে বিলাসী নেতা, অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে পা মিলিয়েছেন সেই রিকশাচালক। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে সরাসরি মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন সুজন। মনোনয়ন ফরম হাতে নিয়ে বলেন, “আমি সংগ্রাম দেখেছি, সংগ্রাম করেছি। জনগণের প্রতিনিধি হয়ে নির্বাচন করতে চাই।”
রাজধানীর মতিঝিল, রমনা, শাহবাগ, পল্টন এবং শাহজাহানপুর থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসন বরাবরই রাজনৈতিকভাবে ঐতিহ্যবাহী। চলতি নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা হলেন—বিএনপি’র মির্জা আব্বাস, জামায়াতের এ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান হাদী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির রিকশাচালক সুজন।
সুজনের এই প্রার্থী হওয়া বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে বিশেষ বার্তা বহন করে—সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব, সামাজিক সংকট-পীড়িত জনগণের মঞ্চে উদ্যোমী উত্থান। রাজনীতির চেনা গণ্ডি পেরিয়ে, শ্রমজীবী, নিভৃতচারী মানুষের নির্বাচনী স্বপ্নকে সামনে ফেরত আনা এই ঘটনা রাজধানীর নির্বাচনী মাঠে নতুন সম্ভাবনার গল্প রচনা করছে।
শাহবাগের স্যালুট হয়ে উঠেছে গণতান্ত্রিক সম্মান ও সংগ্রামের দৃষ্টান্ত। রিকশা চালিয়ে জীবন কাটানো সুজন আজ নির্বাচনী লড়াইয়ে—রাজনীতিকে ঘুরিয়ে দিতে চান শহরের সাধারণ মানুষের জন্য। ভোটের রাজনীতিতে আশার নতুন আলো, বুকভরা সাধারণত্বের শক্তি—এই গল্প রাজধানীর উত্থানমান নির্বাচনের প্রতীক হয়ে থাকুক।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।
১০৭ বার পড়া হয়েছে