৪৪ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদে আবারও শিবিরের নেতৃত্ব

বৃহস্পতিবার , ১৬ অক্টোবর, ২০২৫ ২:০৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দীর্ঘ ৪৪ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে আবারও নেতৃত্বে ফিরেছে ইসলামী ছাত্রশিবির।
সংগঠনটির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ ভিপি ও জিএসসহ মোট ২৬টি পদের মধ্যে ২৪টিতে জয় লাভ করেছে।
ভিপি (সহসভাপতি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন মো. ইব্রাহিম হোসেন। তিনি ইতিহাস বিভাগের এমফিলের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি। তিনি পেয়েছেন ৭,৯৮৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের সাজ্জাদ হোসেন পেয়েছেন ৪,৩৭৪ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে বিজয়ী হয়েছেন একই প্যানেলের সাঈদ বিন হাবিব, যিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক এবং ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। তিনি পেয়েছেন ৮,০৩১ ভোট, যেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মো. শাফায়াত পেয়েছেন মাত্র ২,৭৩৪ ভোট।
চাকসুর এই নির্বাচনে মোট ২৬টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল থেকে একমাত্র বিজয়ী প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে, তিনি পেয়েছেন ৭,০১৪ ভোট। এছাড়া সহ খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তামান্না মাহবুব।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন। তিনি বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল প্রশংসনীয়।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির সর্বশেষ জয় পেয়েছিল ১৯৮১ সালে। সে বছর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন জসিম উদ্দিন সরকার এবং জিএস হয়েছিলেন আবদুল গাফফার। এরপর ১৯৯০ সালের নির্বাচনে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’র কাছে পরাজিত হয় সংগঠনটি।
তবে ২০১৪ সালের পর থেকে রাজনীতির ময়দান থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিল ছাত্রশিবির। দীর্ঘ প্রায় এক দশক পর, ২০২৪ সালের আগস্টে সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে আবার ক্যাম্পাস রাজনীতিতে সক্রিয় হয়। আর ঠিক এক বছরের মাথায় বড় জয় নিয়ে ফিরে এলো শিবির-সমর্থিত জোট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনেকে মনে করছেন, এই নির্বাচন শুধু ছাত্র রাজনীতির জন্য নয়, পুরো ক্যাম্পাস রাজনীতির জন্য একটি মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ঘটনা।
এবারের চাকসু নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দিয়েছেন বহু নতুন শিক্ষার্থী। অনেকেই বলছেন, জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে না পারলেও চাকসুর মাধ্যমে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত মাত্র সাতবার চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে— ১৯৭০, ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১, ১৯৯০ এবং ২০২৫ সালে।
১১২ বার পড়া হয়েছে