পাহাড়ে সহিংসতা: ইউপিডিএফকে দায়ী করল সেনাবাহিনী

মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১১:১২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সম্প্রতি সংঘটিত সহিংসতার পেছনে ইউপিডিএফের (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সেনাবাহিনীর ২০৩ পদাতিক ব্রিগেড ও খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ।
তিনি বলেন, “ধর্ষণের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা ছড়ানোর চেষ্টা করছে ইউপিডিএফ। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এই অশান্তি বড় ষড়যন্ত্রের অংশ, যার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার অপচেষ্টা চলছে।”
সংঘর্ষ ও প্রাণহানি
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খাগড়াছিতে শুরু হওয়া সংঘর্ষ রূপ নেয় রণক্ষেত্রে। ঘটনার সূত্রপাত হয় এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ডাকা সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের মধ্যেই। রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রামসু বাজার এলাকায় আগুন জ্বালিয়ে পিকেটিংয়ের সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে পাহাড়িদের প্রথম সংঘর্ষ হয়। পরে তা স্থানীয় বাঙালিদের সঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় গুলিতে প্রাণ হারান তিন পাহাড়ি যুবক। নিহতরা হলেন:
থোয়াইচিং মারমা (২৫), বটতলা পাড়া
আখ্র মারমা (২৪), সাইংগুলি পাড়া
আথুইপ্রু মারমা (২), লিচু বাগান, হাফছড়ি গ্রাম
নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আহত ও ক্ষয়ক্ষতি
সংঘর্ষে ১৩ সেনাসদস্য ও গুইমারা থানার ওসিসহ ৩ পুলিশ সদস্য আহত হন।
অগ্নিসংযোগে পুড়ে যায় রামসু বাজারের বহু বসতবাড়ি, দোকানপাট, মোটরসাইকেল ও সরকারি স্থাপনা।
আহতরা অনেকেই স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
অবরোধ, ১৪৪ ধারা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ঘটনার পর জেলা প্রশাসন খাগড়াছি শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে, যা এখনো বহাল আছে।
অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জুম্ম ছাত্র-জনতা কিছুটা শিথিলতার ঘোষণা দিলেও কার্যত বন্ধ রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
খাগড়াছি শহরজুড়ে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব ও বিজিবি।
মুখ্যমুখি হতে হচ্ছে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের।
প্রশাসনের পদক্ষেপ ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনও গুইমারার রামসু বাজারে পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
খাগড়াছি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, “জননিরাপত্তার স্বার্থে ১৪৪ ধারা বলবৎ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তা প্রত্যাহার করা হবে।”
আইনি অগ্রগতি ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোর চয়ন শীলকে আটক করে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
তবে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে গুইমারা থানা।
রবিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, “ধর্ষণ, অস্ত্রধারিতা, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত কেউই ছাড় পাবে না। আইনগত ব্যবস্থা কঠোর হবে।”
অবরোধে পর্যটক ও সরবরাহ সংকট
অবরোধের কারণে হাজারো পর্যটক সাজেকে আটকা পড়েন। পরে প্রশাসনের সহায়তায় তারা চট্টগ্রামসহ নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছান।
এছাড়া, চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছি প্রবেশপথে শতাধিক পণ্যবাহী যান আটকে থাকায় জেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সেনাবাহিনীর অবস্থান
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ বলেন, “সেনাবাহিনীর গাড়িতে হামলায় তিন সৈনিক আহত হয়েছেন। বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে পরিকল্পিতভাবে উসকানি দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। আমরা পার্বত্য এলাকার প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত। অপপ্রচার কিংবা ষড়যন্ত্রে সেনাবাহিনী পিছিয়ে যাবে না।”
সর্বশেষ পরিস্থিতি:
তৃতীয় দিনের মতো ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে। পরিস্থিতি এখন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও জনমনে আতঙ্ক, অবিশ্বাস এবং অনিশ্চয়তা কাটেনি।
১৩৪ বার পড়া হয়েছে