সর্বশেষ

সারাদেশ

ঝিনাইদহে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা, প্রশাসনের নীরবতায় প্রশ্ন

এইচ এম ইমরান, ঝিনাইদহ
এইচ এম ইমরান, ঝিনাইদহ

মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৪:৪৭ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ঝিনাইদহ জেলার স্কুল ও কলেজগুলোতে চলছে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের জমজমাট ব্যবসা।

শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে অন্ধকার নামাচ্ছে ‘লেকচার’, ‘ব্যতিক্রম’, ‘পাঞ্জেরী’ ও ‘অ্যাডভান্স’ এর মতো গাইড বই। এসব প্রকাশনার বিরুদ্ধে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জেলা জুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেগুলোর ব্যবহার এখন ওপেন সিক্রেট।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটি গোপনে গাইড কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আর্থিক চুক্তি করছেন। গড়ে প্রতি শিক্ষার্থী থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে কমিশন নেওয়া হচ্ছে, যা গাইড কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে নগদে আদায় করা হয়।

ঝিনাইদহ জেলার ছয়টি উপজেলার প্রায় ৪২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে নিষিদ্ধ গাইড বই চালানোর জন্য বিভিন্ন প্রকাশনার সঙ্গে বড় অঙ্কের চুক্তি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের ওপর গাইড বই কেনার চাপ সৃষ্টি করছে। অভিযোগ রয়েছে, গাইড না কিনলে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ঢুকতে পর্যন্ত দেওয়া হয় না।

লাখ টাকার চুক্তি
শুধু শহরের কাঞ্চননগর স্কুল অ্যান্ড কলেজেই একটি গাইড কোম্পানির প্রতিনিধি থেকে ৫ লাখ টাকা গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষার্থীদের বই কিনতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া আরও যেসব প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:

মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান বালিকা বিদ্যালয় – ২ লাখ টাকা
হাট গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় – ৩.৭ লাখ টাকা
উত্তর নারানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় – ২.৫ লাখ টাকা
এম কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় – ১.৪ লাখ টাকা
আরও বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা গোপনে গাইড বই বিক্রির সঙ্গে জড়িত।

 

'এজেন্ট'দের দাপট
ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর, পাগলাকানাই ও উপশহর এলাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে গাইড বইয়ের অবৈধ মজুদ কেন্দ্র। উদয়ন লাইব্রেরির মালিক রাকিবুল ইসলাম রণি একাই ১২টি গাইড কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। তিনি ২০২৬ সালে জেলার শতাধিক কোচিং সেন্টারে প্রায় ২ কোটি টাকার গাইড বই সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

এছাড়া ‘লেকচার’ প্রকাশনার মঞ্জুরুল ইসলাম, সম্রাট কুমার, ‘পাঞ্জেরী’ এর আলী হোসেন ও সাদিক হোসেন এবং ‘অ্যাডভান্স’ এর মিজানুর রহমান সরাসরি মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন।

শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বেও দুর্নীতির অভিযোগ
কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে লেকচার গাইড কোম্পানির কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা তিনি উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গাইড বই চালু করার জন্য ব্যবহার করছেন।

অভিভাবকদের ক্ষোভ
অভিভাবক কামরুজ্জামান জানান, “বই না কিনলে ছেলে-মেয়েকে ক্লাসেই ঢুকতে দেওয়া হয় না।” তিনি বলেন, “দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলের জন্য ৮ হাজার টাকা দিয়ে গাইড ও টেস্ট পেপার কিনতে হয়েছে।” একই অভিযোগ করেছেন হুসাইন নামে আরেক অভিভাবকও।

প্রশাসনের অবস্থান
জানতে চাইলে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, “এই বই বিক্রি সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনৈতিক। প্রশাসনের পক্ষে অভিযান চালিয়ে এই অনৈতিক ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব।” তিনি কারা জড়িত, তাদের একটি তালিকা চেয়েছেন সাংবাদিকদের কাছ থেকে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের শিক্ষা ও আইসিটির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ.বি.এম. খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, “তথ্য-প্রমাণ পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। গাইড বই শিক্ষার্থীদের মনন বিকাশে অন্তরায়। তাই দ্রুতই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

১০৯ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন