নেপালে লুটপাটের মালপত্র ফেরত দেওয়ার বিরল দৃশ্য

সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১১:১১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
নেপালের সাম্প্রতিক জেন–জি আন্দোলনের সময় দেশজুড়ে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও, আন্দোলনের পর পাল্টে যেতে শুরু করেছে পরিস্থিতি।
অনেকেই লজ্জা, দায়িত্ববোধ কিংবা সামাজিক চাপের কারণে লুট করে নেওয়া পণ্য এখন ফেরত দিতে শুরু করেছেন।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) নেপালি সংবাদমাধ্যম ‘সেতুপাতি’-এর এক প্রতিবেদনে উঠে আসে এই ব্যতিক্রমী মানবিকতার চিত্র।
ভাতসহ ফিরিয়ে দেওয়া রাইস কুকার
সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি ঘটেছে সিজি কোম্পানির বিশালনগর শোরুমে। শোরুমটির খুচরা ব্যবস্থাপক বসন্ত পাল জানান,
“আমরা মাইকিং করে অনুরোধ জানিয়েছিলাম— যাঁরা ভুল করে কিছু নিয়ে গেছেন, দয়া করে ফেরত দিন। এরই মধ্যে এক ব্যক্তি রাইস কুকারে রান্না করা ভাতসহ সেটি ফেরত দিয়ে যান।”
‘নতুন বোতল কিনে এনেছি’
এমনই আরেকটি ঘটনা ঘটে ভাটভাটেনি সুপারস্টোরে। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবক একটি অক্ষত মদের বোতল ফেরত দেন। কর্মীরা ধন্যবাদ জানালে তিনি বলেন,
“সেদিন যে বোতল নিয়েছিলাম, তা তো শেষ হয়ে গেছে। এটা নতুন কিনে আনলাম।”
ভাটভাটেনির এক কর্মকর্তা জানান, অনেকেই বোতল খালি করে নতুন কিনে ফেরত দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ প্রকাশ্যে স্বীকার করছেন যে সবাই জেনে গেছে তারা কী নিয়েছেন— তাই ফেরত দিচ্ছেন।
স্থানীয়দের উদ্যোগে মালামাল উদ্ধার
কাঠমান্ডুর হাডিগাঁও এলাকায় স্থানীয়দের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে লুটপাট হওয়া পণ্য উদ্ধার করে দোকানে ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ত্রিরত্ন ডংগোল বলেন,
“আমরা এলাকাবাসীর সুনাম বাঁচাতে নিজেরাই বাড়ি বাড়ি ঘুরে খোঁজ করেছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ শতাংশ সামগ্রী উদ্ধার করে ফেরত দিতে পেরেছি।”
ফেরত আসা জিনিসের মধ্যে রয়েছে— ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, ফ্যান, প্রেসার কুকার, রাইস কুকার এমনকি লোহালক্কড়ও।
‘সামগ্রী ফিরিয়ে দিই’ প্রচারণা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন ‘সামগ্রী ফিরিয়ে দিই’ শিরোনামে একটি প্রচারণা চালু হয়েছে। ভিডিও ও ছবির মাধ্যমে উৎসাহিত করা হচ্ছে লুট করা পণ্য ফেরত দিতে। এ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।
সিজি শোরুমের প্রতিনিধি বসন্ত পাল বলেন,
“এই ঘটনায় আমরা বুঝতে পেরেছি, কোম্পানি ও স্থানীয় কমিউনিটির মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলা কতটা জরুরি। ভবিষ্যতে আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাই।”
ভাটভাটেনির কর্মকর্তারা জানান, কাঠমান্ডুর বাইরের শাখাগুলো থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি পণ্য ফেরত এসেছে, বিশেষ করে বীরতমোড শাখায়।
বিশ্বজুড়ে প্রশংসা
নেপালের এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। অনেক বিদেশি বিশ্লেষক ও নেটিজেন বলছেন,
“দায়িত্ববোধ ও নৈতিকতার এমন দৃষ্টান্ত খুব কমই দেখা যায়। নেপালি জনগণ লুটপাটের পর নিজেরাই জিনিস ফেরত দিয়ে এক অসাধারণ উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।”
১১৬ বার পড়া হয়েছে