ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় রাশিয়ায় পেট্রলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি

রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫ ৪:০০ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাশিয়ার একাধিক তেল শোধনাগারে ইউক্রেনের ধারাবাহিক ড্রোন হামলার জেরে দেশটিতে পেট্রলের দাম রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রুশ সরকার পেট্রল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যবৃদ্ধি থামানো যাচ্ছে না।
গ্রীষ্ম মৌসুমে পরিবহন ও কৃষি খাতে জ্বালানির চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। এই সময়েই ইউক্রেন নিজেদের কৌশলগত হামলা জোরদার করেছে। তেল শোধনাগার, পাম্পিং স্টেশন ও জ্বালানিবাহী ট্রেনের মতো অবকাঠামোগুলো ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেনের উদ্দেশ্য রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন ব্যাহত করা ও সাধারণ জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় চাপ সৃষ্টি করা।
সিএনএনের তথ্যমতে, আগস্ট মাসেই কমপক্ষে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ রুশ জ্বালানি স্থাপনায় ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, আক্রান্ত শোধনাগারগুলো বছরে ৪ কোটি ৪০ লাখ টনের বেশি জ্বালানি পরিশোধন করত, যা রাশিয়ার মোট পরিশোধন সক্ষমতার ১০ শতাংশেরও বেশি।
দক্ষিণ রাশিয়ার ভলগোগ্রাদ শহরে অবস্থিত বৃহত্তম শোধনাগার লুকওয়েল এ মাসে দুই দফা হামলার শিকার হয়েছে। ১৪ ও ১৯ আগস্ট হামলার ঘটনায় শোধনাগার থেকে আগুন ও ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই আঘাতের কথা স্বীকার করেছে। এছাড়া সারাতভ ও রোস্তভ অঞ্চলেও বড় ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এই হামলাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির পেট্রল বাজারে সরবরাহে সংকট তৈরি হয়েছে। শুধু আগস্ট মাসেই সেন্ট পিটার্সবার্গ এক্সচেঞ্জে পেট্রলের পাইকারি মূল্য বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এ বৃদ্ধির হার প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে।
রাশিয়ার জ্বালানি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনইএফটি রিসার্চ এর ব্যবস্থাপনা অংশীদার সের্গেই ফ্রোলভ কোমারসান্ত পত্রিকাকে জানান, "দুর্ভাগ্যবশত, মূল্য হ্রাসের কোনো লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। আগামী এক মাসের মধ্যে তেমন স্বস্তি আসবে বলেও মনে হচ্ছে না।"
মূল্যবৃদ্ধির বোঝা পড়ে যাচ্ছে ভোক্তাদের ওপর। বিশেষ করে রাশিয়ার দূর-পূর্বাঞ্চলে এর প্রভাব আরও গভীরভাবে অনুভূত হচ্ছে। কিছু অঞ্চলে এবং রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়ায় জ্বালানির ঘাটতির খবর পাওয়া গেছে। ক্রিমিয়ার গভর্নর সের্গেই আকসেনভ বলেন, “সরবরাহব্যবস্থায় জটিলতার কারণে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।”
এদিকে ইউক্রেনপন্থী গোষ্ঠী 'ইয়েলো রিবন'-এর এক সদস্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, “ক্রিমিয়ায় ভালো মানের পেট্রল বাজার থেকে প্রায় উধাও হয়ে গেছে। এটি ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার সরাসরি প্রভাব।”
তবে সামরিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, রুশ সেনাবাহিনীর উপর এই হামলার প্রভাব সীমিত। কারণ, তাদের প্রধান জ্বালানির উৎস ডিজেল, যার সরবরাহ এখন পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাশিয়ার পেট্রল সংকট এবং মূল্যবৃদ্ধির এই পরিস্থিতি আরও কতটা দীর্ঘায়িত হবে, তা নির্ভর করছে ইউক্রেনীয় হামলার ধারা ও রুশ সরকার কতটা দ্রুত সরবরাহব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয় তার ওপর।
১২১ বার পড়া হয়েছে