চুনিয়াগাড়ির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার বেহাল দশা: থমকে আছে সার্বিক উন্নয়ন

মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫ ১২:০২ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত একটি সম্ভাবনাময়, জনবহুল ও উন্নয়নশীল গ্রাম চুনিয়াগাড়ি।
গ্রামটিতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং একটি বড় মাদ্রাসা রয়েছে। তবে গ্রামের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ রাস্তার দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার কারণে উন্নয়নের গতিধারা থমকে আছে। ফলে শিক্ষা, কৃষি, যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে গ্রামবাসী প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের মুখে পড়ছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ৯নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত এই গ্রামটি ছোট চুনিয়াগাড়ি ও বড় চুনিয়াগাড়ি—এই দুটি অংশে বিভক্ত। ছোট চুনিয়াগাড়ি থেকে বড় চুনিয়াগাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা এখনো কাঁচা। শুষ্ক মৌসুমে কোনোরকমে চলাচল করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে রাস্তার খানাখন্দ বৃষ্টির পানিতে ভরে গিয়ে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে। অনেক সময় রাস্তা আর ফসলের জমির পার্থক্য করাই কঠিন হয়ে যায়।
এ অবস্থায় ছোট ছোট বাহন চলাচল করতে না পারায় কৃষকরা উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে না পেরে বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রায়ই রাস্তার গর্তে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
একইভাবে বটতলী থেকে বিশ্ববাঁধ পর্যন্ত আধা কিলোমিটার রাস্তা অনেক আগেই ইট দিয়ে নির্মাণ করা হলেও দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বর্তমানে তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইট উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এই পথে চলাচলের সময় প্রায়ই ছোট বাহন উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে।
তালতলি থেকে বিশ্ববাঁধ পর্যন্ত আরও একটি রাস্তার একই অবস্থা। বর্ষায় কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায় রাস্তাটি। ফলে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে ভয় পায়। শিক্ষকরাও যোগদান করলেও কিছুদিন পরেই রাস্তাঘাটের দুরবস্থার কারণে বদলির জন্য আবেদন করতে বাধ্য হন। অথচ গ্রামের সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ পান না। ফলে তাদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
চুনিয়াগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মতিন ও ফায়জুল বারি জানান, প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের স্থায়ী বসবাস এ গ্রামে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় গ্রামের উৎপাদনশীলতা ও জীবনমান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের দাবি, "যতদিন না প্রত্যন্ত গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে, ততদিন জাতীয় উন্নয়নও অসম্পূর্ণ থাকবে।"
গ্রামের আরেক বাসিন্দা ও শিক্ষক আলমগীর বাবু বলেন, “রাস্তার বেহাল দশার কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ক্রমেই কমছে। অভিভাবকরাও সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে অনিচ্ছুক হয়ে উঠছেন। এমনকি সামাজিক সম্পর্ক বা বিবাহসূত্রেও পিছিয়ে পড়ছে গ্রামবাসী। অনেক ভালো পরিবার থেকেই এখন আর সম্পর্ক করতে চায় না।”
স্থানীয় বাসিন্দা ময়েন উদ্দিন বলেন, “বিগত সরকারগুলো আমাদের গ্রামের এই রাস্তাগুলোর উন্নয়নে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। বরাদ্দ আসলেও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা সেটি আত্মসাৎ করেছেন। তাই আমরা চাই, অবিলম্বে এই তিনটি রাস্তার উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক বর্তমান সরকার।”
এ বিষয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ইবনুল আবেদীন বলেন, “গ্রামীণ অর্থনীতি ও জীবনমানে টেকসই উন্নয়ন আনতে হলে প্রথমেই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। আমি অচিরেই চুনিয়াগাড়ি গ্রামের রাস্তা পরিদর্শন করে আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
চুনিয়াগাড়ি গ্রামের তিনটি রাস্তাকে দ্রুত পাকা ও টেকসই করার দাবি জানিয়ে হাজারো গ্রামবাসী সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
১২২ বার পড়া হয়েছে