সর্বশেষ

জাতীয়বিদায় খালেদা জিয়া: সব চেষ্টা ব্যর্থ, চলে গেলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
সারাদেশবগুড়ার দুই আসনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা
ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন মির্জা ফখরুল
কুমারখালীতে দ্রুতগতির ড্রাম ট্রাকের চাপায় কলেজ শিক্ষার্থীর পা বিচ্ছিন্ন
আন্তর্জাতিকসেনাসমর্থিত ইউএসডিপির একতরফা জয়ের আভাস, ভোটে বাধ্য করার অভিযোগ
খেলাঅনুশীলনের সময় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ঢাকার সহকারী কোচ
রাজনীতি

বেগম জিয়ার বর্ণাঢ্য জীবন: ১৯৪৫–২০২৫- মহাকালের সমাপ্তি

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২:৫৩ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর নেই। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।

খালেদা জিয়া ১৯৮১ সালে স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দৃশ্যপটের বাইরে থেকে একেবারে রাজনীতির ‘হাইওয়ে’তে উঠে আসেন। নিতান্তই একজন গৃহবধূ ছিলেন খালেদা জিয়া। রাজনীতির চৌকাঠ মাড়াতে হবে—এ কথা হয়তো কল্পনাতেও ছিল না।

বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর চেয়ারপারসন ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সাল থেকে তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নির্বাচিত নারী সরকারপ্রধান।

বেগম জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুর জেলায় ইস্কান্দার মজুমদার ও তৈয়বা মজুমদারের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে দেশভাগের পর তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে চলে আসেন। তার আদি বাড়ি দেশের দক্ষিণ-পূর্ব জেলা ফেনীতে। তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৯৬০ সালে তিনি জিয়াউর রহমানকে বিয়ে করেন।

জিয়াউর রহমান বীর উত্তম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হলে বেগম জিয়া ফার্স্ট লেডি হিসেবে তার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এবং নেদারল্যান্ডসের রানি জুলিয়ানাসহ বিশ্বনেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

১৯৮১ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শাহাদাতবরণ করার পর তিনি ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি সাধারণ সদস্য হিসেবে বিএনপিতে যোগদান করেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি দলের ভাইস-চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৪ সালের আগস্টে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।

১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানের পর খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক আন্দোলনের সূচনা করেন। এরশাদের স্বৈরশাসনের অবসানে ১৯৮৩ সালে গঠিত সাতদলীয় জোটের অন্যতম স্থপতি ছিলেন তিনি। তিনি ১৯৮৬ সালের কারচুপির নির্বাচনের বিরোধিতা করেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। যদিও আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-সহ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা এরশাদের অবৈধ সরকারকে বৈধতা দেওয়ার জন্য জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন শাসনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।

তার দৃঢ় সংকল্পের কারণে ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তাকে সাতবার আটক করা হয়। তিনি বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করেন, যার ফলে সারা দেশের ৩২১টি ছাত্র সংসদের মধ্যে ২৭০টিতে তারা বিজয় লাভ করে। এসব ছাত্র এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৮০-এর দশকে এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ভূমিকার কারণে তিনি ‘আপোষহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অবাধ ও সুষ্ঠু সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তার প্রধানমন্ত্রীত্বকালে বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন করে। তার শাসনামলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা হয়। এই সময় কর্মসংস্থানের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় এবং শুধু তৈরি পোশাকশিল্প খাতেই পাঁচ বছরে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় ২৯ শতাংশ। প্রায় দুই লাখ নারী এ সময় তৈরি পোশাকশিল্পে যুক্ত হন।

তিনি জাতিসংঘে গঙ্গার পানি বণ্টন সমস্যা উত্থাপন করেন, যাতে বাংলাদেশ ন্যায্য অংশ পায়। ১৯৯২ সালে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের সমস্যা তুলে ধরেন। এর পর ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

১৯৯৬ সালে বিএনপির নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর তিনি টানা দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং পুনর্নির্বাচনের প্রতিশ্রুতির কারণে এক মাসের মধ্যেই তিনি পদত্যাগ করেন। জুন ১৯৯৬-এর নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হলেও ১১৬টি আসন পেয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

১৯৯৯ সালে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে চারদলীয় জোট গঠন করে এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। দুর্নীতি ও সন্ত্রাস নির্মূলের অঙ্গীকার নিয়ে তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন। নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকার জন্য ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০০৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় তাকে ২৯তম স্থানে স্থান দেয়।

২০০৬ সালে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্বাসনে পাঠানোর একাধিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে স্বৈরাচারী সরকার দুর্নীতির তুচ্ছ ও ভিত্তিহীন অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে।

ক্ষমতাকালে তার সরকার বাধ্যতামূলক ও বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা, মেয়েদের জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা, ছাত্রীদের উপবৃত্তি ও খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা কর্মসূচি চালু করে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয় এবং শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়।

বেগম খালেদা জিয়া কোনো নির্বাচনী আসনে পরাজিত না হওয়ার বিরল রেকর্ডের অধিকারী। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পাঁচটি ভিন্ন সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে যে তিনটি আসনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, সেখানেও তিনি বিজয়ী হন।

১২২ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন














সর্বশেষ সব খবর
রাজনীতি নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন