আঙ্কারার কাছে বিমান দুর্ঘটনায় লিবিয়ার সেনাপ্রধানসহ নিহত ৮
বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩:৩৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার উপকণ্ঠে একটি প্রাইভেট জেট বিধ্বস্ত হয়ে লিবিয়ার সেনাপ্রধান মুহাম্মদ আলী আহমেদ আল-হাদ্দাদসহ মোট আটজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে লিবিয়ার চারজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং তিনজন ক্রু সদস্য রয়েছেন।
মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) রাতে আঙ্কারার এসেনবোগা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ত্রিপোলির উদ্দেশে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই দাসো ফ্যালকন–৫০ মডেলের জেটটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, রাত ৮টা ১০ মিনিটে উড্ডয়নের পর রাত ৮টা ৫২ মিনিটের দিকে বিমানটির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণকক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে আঙ্কারার হায়মানা জেলার কেসিককাভাক গ্রামের প্রায় দুই কিলোমিটার দক্ষিণে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়।
লিবিয়ার জাতিসংঘ–স্বীকৃত সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দবেইবা এক বিবৃতিতে সেনাপ্রধান আল-হাদ্দাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি এই ঘটনাকে ‘মহাবিপর্যয়’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, সরকারি সফর শেষে দেশে ফেরার পথেই এই দুর্ঘটনা ঘটে। দবেইবার মতে, “এই ক্ষতি শুধু সেনাবাহিনীর নয়, পুরো জাতির জন্য অপূরণীয়। দেশসেবায় নিবেদিত ও দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতৃত্বস্থানীয় মানুষকে আমরা হারালাম।”
দুর্ঘটনায় নিহত অন্য সামরিক কর্মকর্তারা হলেন—স্থলবাহিনীর প্রধান আল-ফিতুরি ঘারিবিল, সামরিক বাহিনীর উৎপাদন কর্তৃপক্ষের পরিচালক মাহমুদ আল-কাতাওয়ি, সেনাপ্রধানের উপদেষ্টা মুহাম্মদ আল-আসাওই দিয়াব এবং সামরিক চিত্রগ্রাহক মুহাম্মদ ওমর আহমেদ মাহজুব।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কমিউনিকেশনস ডিরেক্টরেটের প্রধান বুরহানেত্তিন দুরান জানান, উড্ডয়নের পর বিমানটি বৈদ্যুতিক ত্রুটির কথা জানিয়ে জরুরি অবতরণের অনুমতি চেয়েছিল। আঙ্কারায় ফিরে অবতরণের প্রস্তুতির সময়ই বিমানটি রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। তুর্কি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ প্রযুক্তিগত ত্রুটি।
এ ঘটনায় আঙ্কারার প্রধান প্রসিকিউটরের কার্যালয় আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে। পাশাপাশি লিবিয়ার সরকার তদন্তে সহযোগিতার জন্য একটি প্রতিনিধি দল তুরস্কে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আল-হাদ্দাদ লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের প্রভাবশালী সামরিক কমান্ডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফিবিরোধী আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০২০ সালের আগস্ট থেকে তিনি লিবিয়ার সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং বিভক্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে সক্রিয় ছিলেন।
এই দুর্ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল, যখন এর আগের দিনই তুরস্কের পার্লামেন্ট লিবিয়ায় তুর্কি সেনা মোতায়েনের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর অনুমোদন দেয়। ত্রিপোলিভিত্তিক দবেইবা সরকারের সঙ্গে তুরস্কের ঘনিষ্ঠ সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। আল-হাদ্দাদের সফরকালে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলে জানিয়েছে তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
আল-হাদ্দাদের আকস্মিক মৃত্যুতে লিবিয়াজুড়ে গভীর শোকের আবহ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। এ সময় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে এবং সব ধরনের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
১৩২ বার পড়া হয়েছে