কক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৭ পরিবার পেল বিআরটিএর অনুদান
শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩:৪৫ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
দীর্ঘ ৩৪ বছরের প্রবাস জীবন শেষে পরিবারকে সময় দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাসিন্দা রেমিট্যান্স যোদ্ধা আবদুল মান্নান মজুমদার।
কিন্তু সেই স্বপ্ন মুহূর্তেই ভেঙে চুরমার হয়ে যায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায়। গত ৫ নভেম্বর কক্সবাজার ভ্রমণের পথে চকরিয়া এলাকায় মারছা পরিবহনের বেপরোয়া ধাক্কায় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তার স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক পুত্রসহ মেয়ের শ্বশুরবাড়ির আরও দুই সদস্য। একই পরিবারের ছয়জনের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু নাড়া দিয়েছে সবাইকে।
শনিবার সকাল ১১টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ায় সরকার। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ট্রাস্টি বোর্ডের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ২০২৫ সালে কক্সবাজার জেলায় সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের মাঝে অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৭টি পরিবারের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ৩৩টি পরিবার স্বজন হারিয়েছেন, দুইজন গুরুতর আহত এবং দুইজন সাধারণ আহত। কারও হাত-পা নেই, কেউ স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, আবার কেউ এক দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষকে। সবার চোখেমুখে ছিল গভীর শোক আর কান্নার ছাপ।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে অনুদানের চেক তুলে দেন। জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইমরান হোসাইন সজীবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিআরটিএ পরিচালক ও যুগ্ম সচিব রুবাইয়াৎ-ই-আশিক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মো. মাসুদ আলম, বিআরটিএ কক্সবাজার সার্কেলের সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সাংবাদিক নেতারা।
কক্সবাজার বিআরটিএ অফিস সূত্র জানায়, অনুদানপ্রাপ্তদের মধ্যে যাত্রী, পথচারী, চালক ও হেলপার পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। আহতদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা এবং নিহত প্রতিটি পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ নভেম্বর কক্সবাজার-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের ফাঁসিয়াখালী ঢালা এলাকায় মারছা পরিবহন ও একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ফারজানা মজুমদার, রুমেনা বেগম (রুমি), সাদিয়া হক, ফারহানা মজুমদার ও রিজোয়ানা ইসলামসহ ছয়জন নিহত হন। এ ঘটনায় নিহত ছয় পরিবারের জন্য মোট ৩০ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
অনুদানের চেক গ্রহণ করে নিহত ও আহত পরিবারের সদস্যরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, প্রিয়জন হারানোর শোক কখনো পূরণ হওয়ার নয়, তবে এই সহায়তা চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও জীবন চালিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দেবে।
এ সময় জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কর্তৃপক্ষ কাজ করছে, তবে দুর্ঘটনা রোধে সবার সচেতন হওয়া জরুরি। বিআরটিএ চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো সরকারের মানবিক দায়িত্ব। এই আর্থিক সহায়তা তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে সহায়ক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
১৩১ বার পড়া হয়েছে