গুম-নির্যাতন মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু
বৃহস্পতিবার , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১১:৩১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
জেআইসি সেলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালকসহ মোট ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। প্যানেলের অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, শাইখ মাহদীসহ অন্য সদস্যরা।
মামলার পলাতক ১০ আসামির মধ্যে পাঁচজন বিভিন্ন সময়ে ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারা হলেন- লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী এবং মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক।
অন্য আসামিরা হলেন- শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক।
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ দেওয়ার দিন ধার্য ছিল ১৪ ডিসেম্বর। সেদিন আদেশ না দিয়ে ট্রাইব্যুনাল পরবর্তীতে ১৮ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করেন। এদিন পুলিশের মাধ্যমে মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
গত ৯ নভেম্বর গ্রেপ্তার তিন আসামির অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু। তিনি বেআইনি আটক, অপহরণ, নির্যাতন এবং গুম—এই চারটি কারণে অব্যাহতির প্রার্থনা করেন। ট্রাইব্যুনাল শুনানিতে বেআইনি আটক, অপহরণ ও নির্যাতনের তিনটি কারণ বিবেচনায় নেওয়ার কথা জানান। পরে পলাতক আসামিদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী হাসান ইমাম, মো. আমির হোসেনসহ অন্যরা শুনানিতে অংশ নেন।
মামলায় প্রসিকিউশন মোট পাঁচটি অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগ গঠনের শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জেআইসি সেলে সরকারবিরোধী ব্যক্তিদের গুম করে রাখা ও নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ২৬ জনকে গুমের শিকার হতে হয়েছে এবং তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।
এর আগে ২৩ নভেম্বর পলাতক আসামিদের জন্য স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়। শেখ হাসিনার পক্ষে স্বেচ্ছায় লড়তে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেডআই খান পান্না দায়িত্ব নিলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে ৩ ডিসেম্বর তিনি সরে দাঁড়ান। পরে মো. আমির হোসেনকে তার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা মামলার তিন সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে শুনানি শেষে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজির করার জন্য দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এরও আগে ৮ অক্টোবর মামলায় ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
১১৩ বার পড়া হয়েছে