যুগ্ম সচিবকে গাড়িতে জিম্মি করে চালকের মুক্তিপণ দাবি
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৪:৫১ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
সরকারের এক যুগ্ম সচিবকে তাঁর নিজস্ব সরকারি গাড়ির ভেতর চার ঘণ্টা জিম্মি করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে ওই গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে।
টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটান চালক আবদুল আউয়াল (৪০)। পরে পরিকল্পনা কমিশন প্রাঙ্গণ থেকে তাঁকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ভুক্তভোগী যুগ্ম সচিব মাকসুদা হোসেন পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগে কর্মরত। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে সরকারি গাড়িতে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনে না গিয়ে চালক গাড়িটি ভিন্ন পথে নিয়ে যান। চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র এলাকা থেকে গাড়ি বিজয় সরণি হয়ে মহাখালী, বনানী ও বিমানবন্দর সড়কের দিকে যেতে থাকে।
এ সময় গাড়ির গন্তব্য পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন করলে চালক কোনো জবাব দেননি বলে জানান মাকসুদা হোসেন। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তিনি এক সহকর্মীকে বিষয়টি জানান এবং জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে চালক জোর করে তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দেন এবং গাড়ির দরজা লক করে দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এরপর চালক গাড়ি নিয়ে উত্তরা দিয়াবাড়ি, বেড়িবাঁধ হয়ে সাভারের হেমায়েতপুরের দিকে যান। পরে আবার গাড়ি ঘুরিয়ে দারুস সালামসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘোরান। দুপুরের দিকে গাড়িটি পরিকল্পনা কমিশনের সামনে নিয়ে আসা হয়।
মাকসুদা হোসেন জানান, চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের মাঠে গাড়ি থামিয়ে চালক তাঁর মায়ের চিকিৎসার কথা বলে ছয় লাখ টাকা দাবি করেন। তাৎক্ষণিকভাবে ৫০ হাজার টাকা দিতে বলেন। তখন তিনি অফিসে গেলে টাকা দেওয়ার কথা বলেন। এরপর চালক তাঁকে পরিকল্পনা কমিশনের ভেতরে নিয়ে আসেন। সেখানেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আবদুল আউয়ালকে আটক করেন।
পরে তাঁকে শেরেবাংলা নগর থানায় হস্তান্তর করা হয়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত চালকের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
এ ঘটনায় প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গাড়িটি ট্র্যাক করছিল বলে জানা গেছে। পরিকল্পনা বিভাগের সচিব শাকিল আখতার জানান, অভিযুক্ত চালক মাদকাসক্ত বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মাকসুদা হোসেন বলেন, চালকের আর্থিক প্রয়োজন থাকলে তিনি সরাসরি জানাতে পারতেন। তাঁকে জিম্মি করে চার ঘণ্টা শহরের বিভিন্ন সড়কে ঘোরানো ছিল সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ও ভয়ংকর অভিজ্ঞতা।
১২০ বার পড়া হয়েছে