সর্বশেষ

জাতীয়বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরছেন ২৫ ডিসেম্বর
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর
অস্ত্রোপচারে হাদির মাথায় গুলির অস্তিত্ব মিলেনি : ঢামেক পরিচালক
দেশ সংকটের মধ্যে, ঐক্যের আহ্বান তারেক রহমানের
রাজধানীর বাড্ডায় চলন্ত বাসে আগুন
ঢাকা-১০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া
আচরণবিধি নিশ্চিতে আজ থেকে মাঠে নামছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা
সারাদেশতানোরে শিশু সাজিদের দাফন সম্পন্ন, জানাজায় মানুষের ঢল
পঞ্চগড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমে ৯.৫ ডিগ্রি
আন্তর্জাতিকজাপানে ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা জারি
খেলাটি-টোয়েন্টি : ১৩ বলের ওভার করে সমালোচনায় আর্শদিপ, সিরিজে সমতায় দক্ষিণ আফ্রিকা
ফিচার

কুষ্টিয়ার সেই অজানা ফ্রন্টলাইন: অ্যান ডি হেনিং-এর লেন্সে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

বৃহস্পতিবার , ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩:৪৩ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
ফরাসি ফটোসাংবাদিক অ্যান ডি হেনিং (Anne de Henning)-এর চোখে ১৯৭১‑এর কুষ্টিয়া যেন মুক্তিযুদ্ধের এক ক্ষুদ্র কিন্তু তীব্র ঘনীভূত মঞ্চ।

তার ক্যামেরায় ধরা পড়া মুক্তিযোদ্ধা, শরণার্থী আর যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর আজও কুষ্টিয়ার সেই দিনগুলোর বিরল নথি হিসেবে ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে।

গোপন পথে সীমান্ত পেরিয়ে কুষ্টিয়ায়

১৯৭১ সালের মার্চের শেষ দিকে নেপালে থাকা অবস্থায় অ্যান ডি হেনিং জানতে পারেন, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সেনা অভিযান শুরু হয়েছে এবং বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ খবর শুনে তিনি কলকাতায় চলে আসেন এবং Associated Press (AP)‑এর আরও কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে মিলে গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার সিদ্ধান্ত নেন।

দুইবার ব্যর্থ চেষ্টার পর তারা গাড়ি ভাড়া করে দারশনা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করতে সক্ষম হন; প্রথমে চুয়াডাঙ্গা, পরে সোজা কুষ্টিয়া অভিমুখে এগিয়ে যান, যেখানে তখন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম দিকের প্রতিরোধ গড়ে উঠছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কুষ্টিয়ার দিনগুলি

কুষ্টিয়ায় পৌঁছে অ্যান ডি হেনিং-এর সামনে প্রথমে ভেসে ওঠে ছিন্নমূল মানুষের স্রোত আর ছাড়খার বাড়িঘর; পাকিস্তানি বোমা ও গোলার ক্ষতচিহ্ন তখনও তাজা।

একই সঙ্গে স্টেশন ও সড়কঘাটে তিনি দেখেন শত শত তরুণ, কেউ কাঁধে পুরনো ৩০৩ রাইফেল, কেউ আবার ধনুক-বাণ নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যারা নিজেদের মুক্তিবাহিনী হিসেবে পরিচয় দিয়ে আধুনিক অস্ত্র চেয়ে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণের আবেদন জানাচ্ছিল।

একটি বিখ্যাত ছবিতে কুষ্টিয়ার পথে হাঁটা এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধাকে দেখা যায়—বুক খোলা, পরনে শুধু লুঙ্গি, কাঁধে রাইফেল আর পাশে ছোট ঝুড়িতে সামান্য মালপত্র—Anne পরে বলেছেন, এই চিত্র তার কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইচ্ছাশক্তি আর দারিদ্র্যসজ্জিত বাস্তবতার প্রতীক হয়ে থাকে।

ট্রাকের গায়ে বসে, লেন্সের সামনে-পেছনে

কুষ্টিয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্রেমে অ্যান ডি হেনিং নিজেই আছেন—ক্যামেরা হাতে একটি ট্রাকের গায়ে বসে, পাশে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা, তার দিকে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে; ছবিটি ৮ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে কুষ্টিয়া এলাকায় তোলা। এ দৃশ্য একদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করা এক তরুণ বিদেশি নারী সাংবাদিকের স্থিরতা, অন্যদিকে অস্ত্রহীনতার ভয় আর অনিশ্চয়তায় ভরা মুক্তিযোদ্ধার মানসিক অবস্থাকে এক ফ্রেমে ধারণ করেছে।

এই সময় তিনি কুষ্টিয়া, পাংশা, কুমারখালী হয়ে চলাচল করেন; কারও বাড়ি খালি, কারও উঠোনে শরণার্থী, আবার কোথাও প্রশিক্ষণরত কিশোররা ধনুক-বাণ হাতে স্লোগান দিচ্ছে—এই সবকিছুই তার লেন্সে যুদ্ধের মানবিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার অংশ হয়ে ওঠে।

সাংবাদিকতার মিশন: ‘বিশ্বকে বলে দাও’

কুষ্টিয়া ও আশপাশের এলাকায় অ্যান ডি হেনিং‑দের ঘিরে মানুষ ভিড় করত, তাদের কথায় বারবার ফিরে এসেছে একটি অনুরোধ—দুনিয়াকে জানাও এখানে কী ঘটছে। তিনি শরণার্থী ট্রেনে চেপে পালিয়ে যাওয়া পরিবার, ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকেও প্রতিরোধ গড়া তরুণ, আর সীমান্তচৌকিতে দাঁড়িয়ে নতুন পতাকা উড়ানো মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি তুলে সেই বার্তাই বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে পৌঁছে দেন।

তার তোলা নেগেটিভগুলো তখন কলকাতা হয়ে প্যারিসের Gamma Photo Agency‑তে পাঠানো হয়; সেখান থেকে আন্তর্জাতিক দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় ছাপা হলেও দীর্ঘ সময় এসব ছবি আর্কাইভের অন্ধকারেই থেকে যায়।

অর্ধশতাব্দী পরে কুষ্টিয়ার ছবির পুনর্জন্ম

প্রায় পঞ্চাশ বছর পর Samdani Art Foundation উদ্যোগ নিয়ে Anne‑এর আর্কাইভ ঘেটে ১৯৭১‑এর কুষ্টিয়া-সহ যুদ্ধকালীন ছবিগুলো নতুন করে প্রকাশ করে, ‘Witnessing History in the Making: Photographs by Anne de Henning, Bangladesh 1971–1972’ শিরোনামে ঢাকায় ও পরে প্যারিসে প্রদর্শনীর আয়োজন করে।

প্রদর্শনীতে কুষ্টিয়ার মুক্তিযোদ্ধা, শরণার্থী আর যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরের কয়েকটি ফ্রেম বিশেষ গুরুত্ব পায়, যেগুলোকে এখন মুক্তিযুদ্ধের ভিজ্যুয়াল আর্কাইভে অমূল্য দলিল হিসেবে দেখা হচ্ছে।


লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট। 

১২৮ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন














সর্বশেষ সব খবর
ফিচার নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন