'সবচেয়ে অপমানবোধ তখন হয় যখন বাংলাদেশের পাসপোর্ট ছুড়ে মাটিতে ফেলে'

শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫ ৩:৩৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার পাশে দাঁড়াতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়া বিশিষ্ট আলোকচিত্রী শহিদুল আলম শনিবার ভোরে দেশে ফিরেছেন।
ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে তাঁকে বহনকারী টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি।
বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসাই আমাকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে। তবে গাজার মানুষ এখনো মুক্ত নয়, আমাদের কাজ শেষ হয়নি।"
তিনি বিশেষভাবে বলেন, "শারীরিক নির্যাতনের কথা বলতে চাই না। তবে যে বিষয়টি আমার সবচেয়ে বেশি অপমানবোধ হয়েছে সেটা হল, ইসরাইলিরা আমাদের বাংলাদেশের পাসপোর্ট ছুড়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছে। এটার জন্য আমাদেরকে বিচার আদায় করে নিতে হবে। কোন দেশ আমাদের সাথে এ ধরণের আচরণ করে পার পেয়ে যেতে না পারে সেটা আমাদের দেখতে হবে।"
শহিদুল আলমকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান তাঁর স্ত্রী ও মানবাধিকারকর্মী রেহনুমা আহমেদ, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক তানজিম ইবনে ওয়াহাব, আলোকচিত্রী ও গবেষক মুনেম ওয়াসিফসহ সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা।
এর আগে শুক্রবার দুপুরে তিনি ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পৌঁছান। সেখান থেকে সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. মিজানুর রহমান।
শহিদুল আলম ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের গাজামুখী জাহাজবহরের সবচেয়ে বড় নৌযান দ্য কনশায়েন্স-এ ছিলেন। বিশ্বের ১৪০ জনেরও বেশি সাংবাদিক, চিকিৎসক, সমাজকর্মী ও মানবাধিকারকর্মী নিয়ে গঠিত এই বহরটি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গাজার দিকে যাচ্ছিল, তবে ইসরায়েলি সেনারা সেটিকে আটকে দেয় এবং সব যাত্রীকে আটক করে।
শহিদুল আলমসহ অনেককে মরুভূমির কারাগারে নেওয়া হয়। যদিও ইতোমধ্যে অধিকাংশ কর্মী মুক্তি পেয়েছেন, তবে বহরের ক্যাপ্টেন অস্ট্রেলীয় নাগরিক মেডেলেইন হাবিব এখনও বন্দি রয়েছেন।
মুক্তির পর নিজের বক্তব্যে শহিদুল আলম বাংলাদেশের পাশাপাশি তুরস্ক সরকারকেও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা না আসা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আরও হাজারটা ফ্লোটিলা পাঠানোর প্রয়োজন আছে।”
শহিদুল আলম স্বাধীন মিডিয়া সংগঠন 'দৃক'-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে সোচ্চার একজন আলোকচিত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। গাজা অবরোধ ভাঙা ও ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে গঠিত ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা’ উদ্যোগের আওতায় অংশগ্রহণ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে তাঁর মুক্তির জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হয় জর্ডান, মিসর ও তুরস্কের মাধ্যমে। শহিদুল আলমের প্রত্যাবর্তনে সহযোগিতা করায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
১২১ বার পড়া হয়েছে