অর্থনীতিতে সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে পায়রা বন্দর

বৃহস্পতিবার , ২১ আগস্ট, ২০২৫ ৭:০৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
চট্টগ্রামের বিকল্প বন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের উন্নয়নকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নিয়ে গড়ে ওঠা এই বন্দর চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের জেটি ও ব্যাকআপ ইয়ার্ডের নির্মাণ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ব্রিজ এবং ৬ লেন সংযোগ সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। ২০২৬ সালের জুলাইয়ে বন্দরের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
আধুনিক সুবিধা ও বিশাল পরিসর
প্রথম টার্মিনালে নির্মিত ৬৫০ মিটার দীর্ঘ জেটিতে একসঙ্গে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের তিনটি জাহাজ ভিড়তে পারবে। বিশাল ব্যাকআপ ইয়ার্ডে কনটেইনার ও বাল্ক পণ্য খালাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটি আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দর হিসেবে ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হয়েছে।
পায়রা বন্দরের প্রকৌশল খাতের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি রয়েছে আন্ধারমানিক নদীর ওপর সেতু ও ৬ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ। যদিও বন্দরের বর্তমান অবকাঠামো ব্যবহার করে গাড়ি ও বাল্ক পণ্য পরিবহন ইতোমধ্যেই সম্ভব বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা।
রাজস্ব ও আয় নিয়ে আশাবাদ
এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই বন্দর থেকে প্রথম বছরেই প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা নিট আয় এবং সরকারের রাজস্ব আয় ৬ হাজার কোটি টাকা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় বছরে বন্দরের আয় বেড়ে সাড়ে ৭শ কোটি টাকা এবং সরকারের আয় ৭ হাজার কোটি ছাড়াবে বলে জানিয়েছেন বন্দরের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) কমডোর মোহাম্মদ আব্দুল কাদের।
শিল্প সম্প্রসারণে নতুন সম্ভাবনা
পায়রা বন্দরের বাণিজ্যিক গুরুত্ব ও সম্ভাবনার বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তিনি বলেন, “শুধু চট্টগ্রামের ওপর নির্ভর করা ঝুঁকিপূর্ণ। পায়রা বন্দর হতে পারে ভালো বিকল্প। কনটেইনারের জন্য চট্টগ্রাম ও বাল্ক পণ্যের জন্য পায়রা ব্যবহার করা যেতে পারে।”
দেশের প্রথম ‘গ্রিন পোর্ট’
পায়রা বন্দরকে দেশের প্রথম গ্রিন পোর্ট হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে নদীপথে পণ্য পরিবহন, বড় জাহাজ হ্যান্ডলিং এবং পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাসুদ ইকবাল জানান, “দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই বন্দর একটি বড় ভূমিকা রাখবে।”
চ্যালেঞ্জও রয়েছে
পায়রা বন্দরের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো মেঘনা নদীর অববাহিকায় চ্যানেলের নাব্যতা রক্ষা করা। বড় জাহাজ চলাচলের জন্য নিয়মিত ড্রেজিং প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ড্রেজিংয়ের খরচ আয় দিয়ে মেটানো গেলেও কয়েক বছরের মধ্যে বন্দরটি লাভজনক হয়ে উঠবে।
রাস্তা উন্নয়নের দাবি
বন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে চালুর পথে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে ভাঙা-কুয়াকাটা সড়ক, যা এখনও দুই লেনবিশিষ্ট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দরের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে এই সড়ককে দ্রুত ৬ লেনে উন্নীত করতে হবে।
১১১ বার পড়া হয়েছে