জনকণ্ঠের দখল ও মামলার খবর: মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ

রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫ ২:০১ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
ঢাকা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় বাংলা পত্রিকা জনকণ্ঠের সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে পত্রিকাটির একদল কর্মী নিজস্ব একটি সম্পাদকীয় বোর্ড গঠন করেছেন।
এই কর্মীরা গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন সময়ে পত্রিকাটিতে নিয়োগ পেয়েছিলেন। শনিবার তাদের কয়েকজনকে মালিকপক্ষ চাকরিচ্যুত করার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা এবং মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে ঢাকার হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
শামীমা এ খান, জনকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক, রাতে অভিযোগ করেন যে, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জনকণ্ঠ ভবনে ‘অবৈধ দখল’ এবং ‘মব সৃষ্টি’ করা হয়েছে। এই অভিযোগে তিনি গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের চিফ অপারেটিং অফিসার অবসরপ্রাপ্ত মেজর আফিজুর রহমান, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও পত্রিকার প্লানিং অ্যাডভাইজর জয়নাল আবেদীন (শিশির) সহ কিছু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। আফিজুর রহমান ও জয়নাল আবেদীন বিবিসি বাংলাকে এই দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জয়নাল আবেদীন বিবিসিকে বলেন, ‘দখলের এই অভিযোগটি আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে এসেছে। আমরা এখনও মালিকানা ও প্রকাশনায় নেই। শুধুমাত্র একটি বোর্ড গঠন করেছি, যা সব সাংবাদিকের সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া সিদ্ধান্ত।’
এদিকে, আজ রোববার সকালে জনকণ্ঠের অনলাইন সংস্করণে দেখা যাচ্ছে, সম্পাদক ও প্রকাশকের নামের বদলে লেখা হচ্ছে, ‘সম্পাদকমণ্ডলী কর্তৃক গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের সদস্য প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে গ্লোব প্রিন্টার্স লি. ও জনকণ্ঠ লি. থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।’
গত রাতে জনকণ্ঠ ভবনের সামনে এক সমাবেশে নিজেকে নতুন সম্পাদকীয় বোর্ডের একজন বলে পরিচয় দেন মীর জসিম। তিনি বলেন, ‘জনকণ্ঠ ও আমার পদ থেকে যিনি আছেন, তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। তবে তিনি প্রকাশক হিসেবে থাকবেন। তাঁর দুই ছেলেও জনকণ্ঠে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।’
জনকণ্ঠের ইতিহাসে, ১৯৯৩ সালে আতিকউল্লাহ খান মাসুদ এই পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। একসময় এটি মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে সিরিজ প্রকাশ করে আলোচিত হয়েছিল। পরবর্তীতে, এটি আওয়ামী লীগপন্থী পত্রিকা হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। তবে ২০২২ সালের আগস্টের পর এর নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগবিরোধী ও জামায়াত-এনসিপি-সমর্থিত ব্যক্তিদের হাতে চলে যায় বলে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের পতনের পর ঢাকার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের মালিকানা ও কর্মী পর্যায়েও পরিবর্তন এসেছে। কোথাও চাপ দিয়ে বা মব সৃষ্টি করে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে অভিযোগ।
জনকণ্ঠের মালিক পক্ষ, মালিকবিরোধী গ্রুপ ও কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আওয়ামী লীগের পতনের কিছু আগে গ্লোব জনকণ্ঠের চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে যোগ দেন ডিজিএফআইর সাবেক কর্মকর্তা আফিজুর রহমান। অভিযোগ, পরবর্তীতে তিনি বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির কিছু নেতাকর্মীকে সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগ দেন এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখেন। একজন বিএনপি নেতার স্ত্রীরও পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
শামীমা এ খান অভিযোগ করেন, আফিজুর রহমান পুরোনো কর্মীদের বাদ দিয়ে নতুন লোকজন এনেছেন এবং তারা ষড়যন্ত্র করে পত্রিকা দখল করেছে। তিনি বলেন, ‘অবসরের পরও তারা বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে জনকণ্ঠে অবৈধ দখল নিয়েছে। তারা নিজেরাই পত্রিকার ব্যানারে কালো রং করে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।’
অভিযোগ অস্বীকার করে আফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষিত ও টেকসই রাখতে যা করা দরকার, সেটাই করেছি। দখলের প্রশ্নই ওঠে না। আমি অনেক অসত্য কথা বলেছি, যা আমি দুঃখের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করি।’
মে মাসেও জনকণ্ঠ ভবনে ‘মব’ তৈরি করে হামলার অভিযোগ উঠেছিল, যেখানে এনসিপি নেতার সংশ্লিষ্টতার কথাও উঠে আসে। এর পরে, বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানটির পুরোনো অনেক কর্মীকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, আবার কেউ কেউ নিজে অব্যাহতি নিয়েছেন।
শামীমা এ খান অভিযোগ করেন, কিছু প্রাচীন কর্মী সমস্যা সৃষ্টি করে জামায়াত ও এনসিপি-সমর্থিত ব্যক্তিদের জনকণ্ঠে আনার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ও আমার সন্তানদের নিষিদ্ধ করেছে, ভবন দখল করেছে। অ্যাকাউন্টসের চাবি নিয়ে গেছে। পুলিশও সাহায্য পায়নি।’
জয়নাল আবেদীন বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা এখনও মালিকানা ও প্রকাশনায় নেই। একটি বোর্ড গঠন করেছি, যারা সবাই সম্মত। বেতন বকেয়া রয়েছে, যা তারা পরিশোধ করছে না। তারা গোঁয়ার্তুমি করছে।’
শামীমা এ খান যুক্তি দেন, কিছু পুরোনো কর্মী সমস্যা সৃষ্টি করে এবং জামায়াত-এনসিপি-সমর্থকদের আনা হয়। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে ও আমার সন্তানদের নিষিদ্ধ করেছে। ভবন দখল করেছে। আমি পুলিশকে জানিয়েও কোনো সহায়তা পাইনি।’
অপরদিকে, আফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি জানি না, কে দখল করছে। আমি পত্রিকা লাল করার জন্য সবাইকে সম্মত করেছি। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি।’
উল্লেখ্য, এই বিষয়গুলো এখনো আদালত ও আইনশৃঙ্খলা সংস্থার নজরে রয়েছে। জনকণ্ঠের ভবিষ্যৎ এখন অজানা।
১১৩ বার পড়া হয়েছে