ঘুষ না দেওয়ায় জাতীয় পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হন কিশোর কুমার

শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫ ৮:৪৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
গত ১ আগস্ট প্রকাশিত হয়েছে ভারতের ৭১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ফলাফল। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেও এই প্রথমবার জাতীয় স্বীকৃতি পেলেন বলিউড তারকা শাহরুখ খান ও রানী মুখার্জি।
বিষয়টি নিয়ে অবাক হয়েছেন অনেকেই। প্রশ্ন উঠেছে—এত বছর পেরিয়ে এসে তাঁদের মতো বড় তারকারা এতদিন কেন উপেক্ষিত ছিলেন?
তবে অবাক করা বিষয় হলো, কেবল শাহরুখ বা রানী নন—ভারতীয় চলচ্চিত্রের আরও অনেক কিংবদন্তিও কখনোই জাতীয় পুরস্কার পাননি। যেমন, কিশোর কুমার, ধর্মেন্দ্র, রাজেশ খান্না, দেব আনন্দ কিংবা মধুবালা—এমন নামগুলো আজও জাতীয় পুরস্কারের তালিকায় অনুপস্থিত। বিশেষ করে কিশোর কুমার একবার এই পুরস্কারের খুব কাছাকাছি গিয়েও ফিরিয়ে দেওয়া হয়—তাও দুর্নীতির কারণে।
সম্প্রতি এক ইউটিউব সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমারের ছেলে অমিত কুমার জানান, ১৯৬৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দূর গগন কি ছাঁও মে’ সিনেমার জন্য তাঁর বাবাকে জাতীয় পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছিল। সেই সিনেমায় কিশোর কুমার নিজেই ছিলেন পরিচালক, নায়ক এবং সুরকার। শিশু চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অমিত কুমার নিজে।
তবে তখন সরকারি এক কর্মকর্তা ফোন করে জানায়, “হকিকত”, “দোস্তি” এবং “দূর গগন কি ছাঁও মে” এই তিনটি সিনেমার মধ্য থেকে একটি পুরস্কার পাবে। এরপর ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়—“আপনি যদি কিছু সহযোগিতা করেন, বিষয়টা সুবিধাজনক হবে।” কিশোর কুমার এমন প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হয়ে সাফ জানিয়ে দেন, তিনি ঘুষ দিয়ে পুরস্কার নিতে চান না।
‘দূর গগন কি ছাঁও মে’ সিনেমাটি মুম্বাইয়ের সুপার সিনেমা হলে টানা ২৩ সপ্তাহ প্রদর্শিত হয়েছিল এবং বাণিজ্যিকভাবেও সফল হয়েছিল। পরবর্তীতে সিনেমাটির রিমেক রাইটস বিক্রি করে দেন দক্ষিণ ভারতের এক নির্মাতার কাছে। ওই তামিল সংস্করণ ‘রামু’ পরে জাতীয় পুরস্কার জিতে নেয়।
কিশোর কুমার তাঁর জীবদ্দশায় কোনো জাতীয় পুরস্কার, এমনকি পদ্মশ্রীও পাননি। তবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে তিনি ছিলেন সবচেয়ে সফল—পুরুষ প্লেব্যাক কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ২৮ বার মনোনয়ন পেয়ে আটবার পুরস্কার জিতেছেন।
গায়ক, অভিনেতা, পরিচালক ও সুরকার—একজন বহুমুখী প্রতিভাবান শিল্পী ছিলেন কিশোর কুমার। তাঁর ‘নৌকরি’ (১৯৫৪), ‘চলতি কা নাম গাড়ি’ (১৯৫৮), ‘পড়োসন’ (১৯৬৮) ও ‘হাফ টিকিট’ (১৯৬২)-এর মতো সিনেমা আজও দর্শকদের প্রিয়। ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর মুম্বাইতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। জাতীয় পুরস্কার না পেলেও দর্শকের ভালোবাসা তাঁকে দিয়েছে অমরতা।
১১৮ বার পড়া হয়েছে