শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

রবিবার, ১ জুন, ২০২৫ ৯:৫৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
জুলাই ২০২৪-এ ছাত্র আন্দোলন দমনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রোববার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এদিন ১৩৪ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন। অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো কোনো ফৌজদারি মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হল। এই শুনানি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে।
পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ
গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা তদন্ত শেষে শেখ হাসিনাকে “মূল মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার” আখ্যা দিয়ে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করে।
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা এক প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে উল্লেখ করে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর উসকানি দেন। তার ফলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সদস্যরা সহিংস হামলায় অংশ নেয়।
দ্বিতীয় অভিযোগে রয়েছে—সরাসরি শেখ হাসিনার নির্দেশেই নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ড্রোন, হেলিকপ্টার ও অন্যান্য মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরীহ জনগণের ওপর আক্রমণ চালায়। তদন্ত সংস্থা বলেছে, তারা এ সংক্রান্ত ফোনালাপ জব্দ করেছে।
বাকি তিনটি অভিযোগে নির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, যেখানে প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত, ২৫ হাজারের বেশি আহত, নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতন, লাশ পোড়ানো এবং চিকিৎসা-বাধার মতো অপরাধের প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, “এই অপরাধগুলোর জন্য সরাসরি ও পরোক্ষভাবে শেখ হাসিনা দায়ী। তবে আমরা একে গণহত্যা নয়, আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলেই বিবেচনা করছি।”
আদালতের নির্দেশ ও পরবর্তী পদক্ষেপ
এই মামলার আরেক আসামি, তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তাকে আগামী ১৬ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এদিকে, শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। তাকে গ্রেফতার করা গেছে কি না, সে বিষয়ে ওই দিন প্রসিকিউশনকে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
জুলাই-অগাস্টের সহিংস দমন অভিযানে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার আইনে সংশোধনী এনে দলীয় বিচার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে।
জামায়াতে ইসলামি ও এনসিপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শেখ হাসিনা ও তার সরকারের বিচার দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়ে আসছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল মন্তব্য করেছেন, “আশা করছি অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই এই বিচার শেষ হবে এবং বিচার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হবে।”
১২৪ বার পড়া হয়েছে