প্লাস্টিক বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাত করছে কেরু!

রবিবার, ১ জুন, ২০২৫ ৬:১৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া প্লাস্টিক বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাত করছে দেশের অন্যতম অ্যালকোহল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেরু এন্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড।
সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এক হাজার মিলিলিটার ও ৫০০ মিলিলিটার বোতলে সরবরাহের অনুমতি দিলেও পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি। পরীক্ষামূলকভাবে চীন থেকে আমদানি করা ১ লিটারের কাঁচের বোতলে গত ডিসেম্বরে ফরেন লিকার উৎপাদনের উদ্বোধন করেছে কেরু।
অভিযোগ রয়েছে, অনুমতি ছাড়াই গত কয়েক বছর ধরে প্লাস্টিক বোতলে দেশীয় লিকার অ্যালকোহল বাজারজাত করছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ ঘটছে, তেমনি অবৈধভাবে সহজেই পাচার ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে কোম্পানির দাবি, অনুমোদন নিয়ে প্লাস্টিক (পেট) বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাত করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪ সালের নভেম্বরের মধ্যে কেরু এন্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড প্লাস্টিক বোতলে দেশীয় লিকার হিসেবে অ্যালকোহল বাজারজাতকরণের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে আবেদন করে। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন, অর্থ ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ মামুন মিয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পরিবেশবান্ধব বোতলের ধরণ নির্ধারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের শর্তে বোতল ব্যবহারের অনুমতি দেন। পরে কেরু কোম্পানি বিষয়টি অনুমোদনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করে।
ওই আবেদনের পর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী ১২ ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানান, পেট বোতলে মদ বাজারজাতকরণের পূর্বে পরিবেশগত ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর উন্মুক্ত দরপত্রের (ওটিএম) মাধ্যমে প্লাস্টিক বোতল ক্রয় করে কেরু কোম্পানি অ্যালকোহল বাজারজাত করবে। ওই প্লাস্টিক বোতল প্রস্তুতকারকদের পরিবেশ ছাড়পত্র থাকলেও কেরু কোম্পানির ডিস্টিলারি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র নেই। এ ছাড়া, সরকার প্লাস্টিক বোতলকে ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ হিসেবে নির্ধারণ করেছে। এই অবস্থায় ডিস্টিলারি প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশ ছাড়পত্র গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক।
তবে, প্লাস্টিক বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাতকরণে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি না থাকলেও, কেরু কোম্পানির পূর্ব আবেদনের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। সর্বশেষ, গত ২৮ এপ্রিল অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ হাবীব তৌহিদ ইমাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ অনুমতি দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করে কোম্পানির সংশ্লিষ্টরা জানান, বছর খানেক আগে এ বিষয়ে চিঠি চালাচালি শুরু হলেও, কেরু কোম্পানি ২০১১ সাল থেকে কাঁচের বোতলের বদলে প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করছে। বিষয়টির বৈধতা দিতে তারা গত বছর থেকে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর ও পরিবেশ দপ্তরে চিঠি চালাচালি করছে।
অপরদিকে, এ ঘটনাকে উদ্বেগজনক ও জনস্বার্থবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশবাদীরা। তারা অবিলম্বে এটি বন্ধের দাবি জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) খুলনা বিভাগের সমন্বয়কারী মাফজুর রহমান মুকুল বলেন, “মদ এমনিতেই একটি বিষক্রিয়া। তা’ যদি আবার প্লাস্টিকের বোতলে বাজারজাত করা হয়, তবে মাইক্রোপ্লাস্টিকের সঙ্গে মদের সংযোগ ঘটবে, যা ভয়াবহ ক্ষতির দিকে নিয়ে যাবে। এটা খুবই বিপদজনক।”
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, “কেরু কোম্পানি থেকে প্লাস্টিক বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাতকরণের জন্য অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা দেয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পত্রে বলা হয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া প্লাস্টিক বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাতের কোনো সুযোগ নেই। এর পরেও কোম্পানি যদি প্লাস্টিকে অ্যালকোহল বাজারজাত করে, সেটি আইনগতভাবে অপরাধ হবে।”
কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (এফএল) মো. রাজিবুল হাসান বলেন, “যেহেতু অন্যান্য পানি প্লাস্টিকের বোতলে বাজারজাত হচ্ছে, সেহেতু অ্যালকোহল বাজারজাত করতেও কোনো বাধা থাকা উচিত নয়। তাছাড়া, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই প্লাস্টিক (পেট) বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাত করা হচ্ছে।”
পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের পরিচালক মো. সাদিকুল ইসলাম বলেন, “প্লাস্টিকের বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাতের কোনো সুযোগ নেই। এমন কোনো অনুমোদনও দেওয়া হয়নি। যদি কেউ করে থাকে, সেটা অবৈধ। প্লাস্টিকের বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাত করলে দুটি ক্ষতি হবে: প্রথমত, пластিক ক্ষতিকর উপাদান; দ্বিতীয়ত, বোতলগুলো পথে-ঘাটে ফেলা হবে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।”
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
৫০৬ বার পড়া হয়েছে