সর্বশেষ

জাতীয়বিদায় খালেদা জিয়া: সব চেষ্টা ব্যর্থ, চলে গেলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
সারাদেশবগুড়ার দুই আসনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা
ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন মির্জা ফখরুল
কুমারখালীতে দ্রুতগতির ড্রাম ট্রাকের চাপায় কলেজ শিক্ষার্থীর পা বিচ্ছিন্ন
আন্তর্জাতিকসেনাসমর্থিত ইউএসডিপির একতরফা জয়ের আভাস, ভোটে বাধ্য করার অভিযোগ
খেলাঅনুশীলনের সময় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ঢাকার সহকারী কোচ
ফিচার

গৃহবধূ থেকে দেশনেত্রী: বেগম খালেদা জিয়ার সংগ্রামী জীবনের অবসানহীন ক্যানভাস

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২:৪৩ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়ার নাম উচ্চারিত হয় অদম্য সাহস, আপোষহীন মনোবল ও দৃঢ় গণতান্ত্রিক বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে। চার দশকের অধিক সময় ধরে লড়াই, কারাবাস, নেতৃত্ব ও ত্যাগে লেখা হয়েছে তার জীবনের কাহিনী—যা আজও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে লক্ষ মানুষের কাছে।

গৃহবধূ থেকে রাজনীতির মঞ্চে
১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্ম নেওয়া খালেদা খানম পুতুল ছিলেন এক শান্ত, সাধারণ গৃহবধূ। ১৯৬০ সালে সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহের পর তিনি পরিবারের দায়িত্বে নিজেকে নিবেদিত করেন। কিন্তু ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক বেদনাদায়ক রাতে চট্টগ্রামে হত্যাকাণ্ডে প্রাণ হারান রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, যা পাল্টে দেয় পুতুলের জীবনের গতি ও দেশের রাজনৈতিক দিকনির্দেশ।
দলের সংকটময় মুহূর্তে বিএনপির নেতাকর্মীদের আহ্বানে ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি রাজনীতির অঙ্গনে প্রবেশ করেন। মাত্র দুই বছরের মধ্যেই তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়ে রাজপথে নেতৃত্ব দেন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আপোষহীন নেতৃত্ব
নব্বইয়ের দশকের গণঅভ্যুত্থানে বেগম খালেদা জিয়া হয়ে ওঠেন স্বৈরতন্ত্র বিরোধী প্রতিরোধের মুখ। গ্রেপ্তার, হুমকি, প্রলোভন—কোনো কিছুই তাকে নত করতে পারেনি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জনগণের ভোটে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাস গড়েন তিনি। তার নেতৃত্বে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তিত হয়, নারীশিক্ষা ও যোগাযোগে আসে দৃশ্যমান গতি।

১/১১-এর কঠিন সময় ও পরিবারের ট্র্যাজেডি
২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খালেদা জিয়া ছিলেন রাষ্ট্রীয় চাপ ও নিপীড়নের কেন্দ্রে। দেশত্যাগের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেছিলেন, “বিদেশে আমার কোনো জায়গা নেই, এই দেশই আমার সব।” একই বছরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়; একই সঙ্গে তার দুই পুত্রকেও হয়রানির শিকার হতে হয়, যা পুরো পরিবারকে প্রচণ্ড মানসিক আঘাতে ফেলে।

দীর্ঘ কারাবাস ও রাজনৈতিক মামলার ঝড়
২০১৮ সালে তথাকথিত দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে তিনি নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে একাধিক বছর কাটান। বিএনপি একে সবসময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বর্ণনা করে এসেছে। ২০২০ সালে নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেয়ে তিনি গুলশানের ‘ফিরোজা’য় অবস্থান করেন—যা কার্যত এক ধরনের গৃহবন্দিত্ব ছিল।

জুলাই অভ্যুত্থান ও পূর্ণ মুক্তি
২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক মানচিত্র পাল্টে যায়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বিশেষ আদেশে বেগম খালেদা জিয়া পান পূর্ণ স্বাধীনতা। সেই দিন তিনি গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণের আহ্বান জানিয়ে ভিডিও বার্তায় বলেন, “এ দেশ গণমানুষের, দমন নয়—অধিকারই হবে ভবিষ্যতের পথ।”

লন্ডন যাত্রা ও মা–ছেলের মিলন
দীর্ঘ অসুস্থতার পর ২০২৫ সালে অবশেষে লন্ডনে উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি। হিথ্রো বিমানবন্দরে এক আবেগঘন মুহূর্তে বড় ছেলে তারেক রহমান তাকে স্বাগত জানান। প্রায় দুই দশক পর মা–ছেলের এই সাক্ষাৎ ছিল রাজনৈতিক জীবনের পেছনের মানবিক অধ্যায়ের প্রতীক।

ফেরার পর হাসপাতালের দিনগুলো
চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় আক্রান্ত এই নেত্রীর পাশে সারাক্ষণ রয়েছেন দলের নেতা–কর্মী ও সমর্থকরা। হাসপাতালের সিসিইউতে থাকা এই প্রবীণ রাজনীতিকের জন্য লাখো মানুষ আজও প্রার্থনায় মগ্ন।

বেগম খালেদা জিয়ার জীবন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক নির্ভীক অধ্যায়—যেখানে সংগ্রাম, ত্যাগ এবং বিশ্বাস মিলে নির্মিত হয়েছে এক নারীর অবিচল প্রতিকৃতি। তিনি কেবল একজন রাজনীতিক নন, বরং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনার এক জীবন্ত প্রতীক—যার অধ্যায় শেষ হয়নি, বরং ক্রমেই অনুপ্রেরণার নতুন পৃষ্ঠা যোগ হচ্ছে প্রতিদিন।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক

১২৮ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন














সর্বশেষ সব খবর
ফিচার নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন