সর্বশেষ

জাতীয়লুথার কিং-এর স্বপ্ন থেকে তারেকের পরিকল্পনা: নতুন স্লোগানের গল্প
১৭ বছর পর দেশে তারেক রহমান: রাজনীতির মোড় ঘোরানোর ইঙ্গিত
সারাদেশচাঁদপুরে মেঘনায় ঘন কুয়াশায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষ, নিহত ২
কুয়াশা কেটে যেতেই পদ্মা-যমুনায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক
আন্তর্জাতিকযুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে: বেইজিং
খেলাআজ থেকে শুরু বিপিএলের দ্বাদশ আসর, উদ্বোধনী ম্যাচ সিলেটে
মতামত

লুথার কিং-এর স্বপ্ন থেকে তারেকের পরিকল্পনা: নতুন স্লোগানের গল্প

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৪:১৭ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
মার্টিন লুথার কিং-এর কণ্ঠে উচ্চারিত সেই বাক্য—“I have a dream”—প্রথম ধ্বনিত হয় ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট, ওয়াশিংটনের লিঙ্কন মেমোরিয়ালের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে।

তিনি তখন বলছিলেন এমন এক আমেরিকার কথা, যেখানে কৃষ্ণাঙ্গ শিশুরা শ্বেতাঙ্গ শিশুদের সঙ্গে একই স্কুলে যাবে, একই পার্কে খেলবে, একই আইনের সুরক্ষা পাবে। সেই ভাষণের কয়েক মাস পরই যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার আন্দোলন আরও গতি পায় এবং পরবর্তী সময়ে নাগরিক অধিকার আইন পাসের মতো ঐতিহাসিক পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত হয়। কিং–এর সেই স্বপ্নবাণী অহিংস আন্দোলনের নৈতিক শক্তিকে বিশ্বজুড়ে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় এবং ১৯৬৪ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পান, মাত্র ৩৫ বছর বয়সে।

প্রায় ৬২ বছর পর, ২০২৫ সালের বাংলাদেশ। এক দশকেরও বেশি রাজনৈতিক অস্থিরতা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ, বিতর্কিত নির্বাচন আর বিরোধী রাজনীতির ওপর দমন–পীড়নের প্রেক্ষাপটে মানুষের ভেতরে জমে আছে ক্লান্তি ও ক্ষোভ, পাশাপাশি পরিবর্তনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। এমন এক সময়ে দীর্ঘ নির্বাসন কাটিয়ে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে তৈরি হয় তীব্র উত্তেজনা ও কৌতূহল। শুধু দলীয় সমর্থক নয়, সাধারণ মানুষ, প্রবাসী বাংলাদেশি, তরুণ ভোটার—অনেকে জানতে চায়, তিনি ফিরলে কী বলবেন, কী পরিকল্পনা দেবেন, কেমন বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি শোনাবেন।

ভাষণের মঞ্চ প্রস্তুত হওয়ার আগেই গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরতে থাকে এক নাম—মার্টিন লুথার কিং। কেউ লিখছে, “বাংলার মার্টিন লুথার কিং কি ফিরছেন?” কেউ বলছে, “I have a dream”–এর যুগ শেষ, এখন দরকার “I have a plan।” লুথার কিং যেমন স্বপ্নের ভাষায় বর্ণবৈষম্যমুক্ত আমেরিকার নৈতিক নকশা এঁকেছিলেন, তেমনি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখন অনেকেই খুঁজছে দুর্নীতিমুক্ত, দমন–পীড়নহীন, আইনের শাসনভিত্তিক একটি পরিকল্পিত পথনির্দেশ।

ভাষণের দিন, দেশের এক প্রান্তে শহরের অ্যাপার্টমেন্টে বসে এক তরুণ সাংবাদিক ইউটিউবে লাইভ স্ট্রিম খুলেছে। তার ডেস্কে খোলা নোটবুক, মাথায় ঘুরছে তুলনা—১৯৬৩’র “I have a dream” আর ২০২৫-এর সম্ভাব্য “I have a plan”। অন্যদিকে গ্রামের একটি স্কুল ঘরে প্রজেক্টর বসিয়ে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভাষণ শুনতে প্রস্তুত। তারা আগে ক্লাসে মার্টিন লুথার কিং-এর কথা, তার নোবেল পুরস্কার, আমেরিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের গল্প শোনিয়েছেন; আজ তারা দেখতে চান, “বাংলার মার্টিন লুথার কিং” বলা এই নেতার কথায় কতটা সাদৃশ্য আর কতটা ভিন্নতা থাকে।

তারেক রহমান যখন ভাষণে বলেন, “I have a plan for my country, for my people”, তখন বাক্যটি সরাসরি সেই ঐতিহাসিক “I have a dream”–এর স্মৃতি জাগিয়ে দেয়। কিং তার স্বপ্নের কথা বলে আমেরিকাকে নৈতিকভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন; আর তারেক এখানে দাবি করছেন, তিনি শুধু স্বপ্ন দেখাতে নয়, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাঠামোগত পরিকল্পনা দিতে এসেছেন। তিনি কথা বলছেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, নিরপেক্ষ নির্বাচন, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, দমন–পীড়ন ও গুম–নির্যাতন বন্ধ, প্রশাসনিক সংস্কার, দুর্নীতিবিরোধী দীর্ঘমেয়াদি নীতি, প্রবাসী আয়কে উন্নয়নের মূল স্রোতে আনা—এসব বিষয় নিয়ে। এই সব প্রতিশ্রুতি শুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষার্থী মনে মনে হিসাব করে, কিং–এর আমেরিকায় যেমন আইন বদলেছিল, এখানে কি সত্যিই আইন ও প্রতিষ্ঠান বদলাবে?

মঞ্চের বাইরে, tea-stall-এর আড্ডায় শুরু হয় তুলনা—লুথার কিং–এর সংগ্রাম ছিল রাস্তার মিছিল, অহিংস নাগরিক অবাধ্যতা আর সামাজিক জাগরণের; বাংলাদেশে তারেক রহমানের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দলীয় রাজনীতি, ক্ষমতার কাঠামো আর রাষ্ট্রযন্ত্রের বাস্তবতা। কেউ বলেন, “কিং স্বপ্ন দেখিয়েছেন, এইজন বলছে প্ল্যান আছে—এটাও বড় কথা, স্বপ্নকে প্ল্যানে নামাতে চাইছে।” আবার কেউ সংশয় নিয়ে জিজ্ঞেস করে, “এই প্ল্যান কি শুধু বক্তৃতাতেই থাকবে, নাকি বাস্তবে নেমে আসবে?”

এভাবে ১৯৬৩ সালের “I have a dream” আর ২০২৫ সালের “I have a plan”–এর মধ্যে দাঁড়িয়ে তৈরি হয় এক প্রতীকী সেতু। এক প্রান্তে নোবেলজয়ী এক কৃষ্ণাঙ্গ নেতা, যিনি আমেরিকার বিবেককে বদলে দিয়েছেন; অন্য প্রান্তে বিতর্ক ও আশা–দুটোর কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এক বাঙালি নেতা, যিনি নিজেকে “বাংলার মার্টিন লুথার কিং” উপমার দাবিদার করতে চান। দুই ভিন্ন সময়, দুই ভিন্ন দেশ, দুই ভিন্ন সংগ্রাম—কিন্তু মানুষের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা একটাই: ন্যায়, সমতা আর মর্যাদার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা একটি নতুন ভবিষ্যৎ, যেখানে স্বপ্ন আর পরিকল্পনা সত্যিই মিলেমিশে যায়।


লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

১০৯ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন














সর্বশেষ সব খবর
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন